বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে নতুন সমীকরণ

ঢাকা (Dhaka): বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি (Bangladesh Nationalist Party)’র সংস্কার প্রস্তাবনা ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। দলটি ২০১৬ সালের ভিশন ২০৩০ থেকে ২০২৩ সালের ৩১ দফা পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্কারমূলক পরিকল্পনা উপস্থাপন করলেও ৫ আগষ্টের পর থেকে বিএনপির প্রতিপক্ষ শিবির থেকে “বিএনপি সংস্কার চায় না” এমন একটি প্রচারণা চোখে পড়ার মতো।

তবে মজার ব্যাপার হলো , বিএনপি’র সংস্কার প্রস্তাবের প্রায় সবগুলোই রয়েছে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে। এর মধ্যে প্রধান প্রধান প্রস্তাব গুলোর মধ্যে রয়েছে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাবনা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করার প্রস্তাব, নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য সহ আরো বেশ কিছু। এখন দেখে নেই কি আছে বিএনপি’র সেই সব প্রস্তাবে —

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাবনা

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের ধারণা বিএনপির ভিশন ২০৩০-এ উঠে আসে। পরে ২০২২ সালের ২৭ দফা ও ২০২৩ সালের ৩১ দফায় এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। দলটির প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চকক্ষের সদস্যরা নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে মনোনীত হবেন। তবে, এখনো এই কাঠামো চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করার প্রস্তাব

বিএনপির ৩১ দফার পঞ্চম দফায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। দলটির দাবি, এটি ক্ষমতার ভারসাম্য আনার একটি প্রচেষ্টা।

নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য

বিএনপি একক নির্বাহী ক্ষমতা সীমিত করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর নিয়োগে অল-পার্টি পার্লামেন্টারি কমিটির ভেটিং এবং বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠনের কথাও বলেছে।

সংস্কার বনাম নির্বাচন: বিতর্ক ও রাজনৈতিক প্রচারণা

বর্তমানে এক ধরনের প্রচারণা চলছে যে, বিএনপি সংস্কারের বিরোধী। যে সংস্কারের ধারনা বিএনপিই প্রথম রাজনৈতিক অঙ্গনে তুলেছিল, সেই বিএনপিকেই এখন সংস্কারের বিরোধি পক্ষে দাঁড় করানো হচ্ছে। ব্যাপারটা অনেকটা মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে দলটির দাবি, সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, এটি কোন জড়ি বটি নয় যে , একবার খেলাম আর সুস্থ হয়ে গেলাম। তারা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের পক্ষে এবং তাদের দাবী এটি নির্বাচনের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন সম্ভব। এখন আপনাকে চিন্তা করে দেখতে হবে, অধিকাংশ মৌলিক সংস্কারের প্রধান প্রস্তাবক যদি বিএনপি হয়, তবে কেন একটি ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে যে, বিএনপি সংস্কার চায় না? কাদের প্রয়োচনায় এমন প্রচারণা ? কিভাবে বা ঠিক কতটুকু তা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত বিএনপি !!

এই বিতর্কের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে, বিএনপিকে ঘিরে রাজনৈতিক সমীকরণ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। সংস্কার ও নির্বাচনের প্রশ্নে দলটির অবস্থান যেমন বিশ্লেষণের দাবি রাখে, তেমনি রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্যান্য শক্তিগুলোর গতিবিধিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কারণ, শুধু অভ্যন্তরীণ অবস্থান নয়—বহির্বিশ্ব ও দেশীয় রাজনৈতিক বাস্তবতাও বিএনপির সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হচ্ছে।

নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ও সম্ভাব্য প্রভাব

বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানও পরিবর্তিত হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami) ও নতুন রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন জোট গঠনের চেষ্টা করছে, যা বিএনপির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিএনপির জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হবে, আওয়ামী লীগ (Awami League)’র ঐতিহ্যগত ভোট ব্যাংকের পরিবর্তন এবং জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর ভোট কৌশল মোকাবিলা করা। তবে এবিষয়ে দ্বিমত আছে অনেকেরই। তাদের মতে এটা অনেকটাই নির্ভর করবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে আসা না আসার উপর অনেকটাই। আর তাছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং ঐতিহাহিক ভাবে ভোটের হার তুলনা করলে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক নিয়ে বিএনপিকে তেমন চিন্তা করার প্রয়োজনও নেই। আওয়ামী লীগ ভোটে না আসলে তাদের ভোটব্যাঙ্কের ভোট বিভক্ত হয়ে পর্বে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর কার ভাগে কতটুকু যাবে তার অনেকটাই নির্ভর করবে আসন ভিত্তিক স্থানীয় রাজনীতির উপর। আর সেক্ষেত্রে বিএনপিই কিছুটা এগিয়ে থাকবে বলেন মনে করা হয়।

তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রশ্ন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)’র দেশে ফেরা নিয়ে দলের অভ্যন্তরেও আলোচনা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা কমে আসায়, কেন তিনি এখনো লন্ডনে অবস্থান করছেন—এ প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা

বর্তমানে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিএনপি এককভাবে নির্বাচনে গেলে কী ফলাফল হবে, সেটি নিয়েও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।

সংগ্রাম বনাম কৌশল: বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির সামনে এখন দুটি পথ খোলা—নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করা, অথবা রাজনৈতিক কৌশলগত জোট গঠনের দিকে মনোযোগ দেওয়া।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, কৌশলগতভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং মাঠপর্যায়ে সংগঠিত থাকা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *