ভারতে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম অন্তর্ভুক্তির আইন নিয়ে মুসলমানদের ঐতিহাসিক সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আশঙ্কা

ভারতে মুসলমানদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক সম্পদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকারের উদ্যোগে পাস হওয়া নতুন ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন অনুযায়ী, মুসলিমদের ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ আইনটি মুসলমানদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক সম্পত্তির উপর সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ কায়েমের চেষ্টা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

ফেসবুকে মন্তব্য করলেন আসিফ নজরুল

আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (Asif Nazrul) এক ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ভারতে মোদি সরকার মুসলমান বিরোধী আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন আইন পাস করে তারা মুসলমানদের ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি পরিচালনা বোর্ডে অমুসলিমদেরও রাখার বিধান করেছে এবং এসব সম্পত্তিতে সরকারের সরাসরি খবরদারির সুযোগ সৃষ্টি করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই আইন ব্যবহার করে পুরোনো মসজিদসহ মুসলমানদের বহু ঐতিহাসিক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”

ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগ

আসিফ নজরুল (Asif Nazrul) তার মন্তব্যে উল্লেখ করেন, ভারতে হিন্দু মন্দির পরিচালনা কমিটিতে অন্য ধর্মাবলম্বীদের রাখার কোনো প্রথা নেই। তাহলে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের রাখা হবে কেন—এই প্রশ্নও তিনি তোলেন।

তিনি আরও বলেন, “এই আইন ভারতে মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর বৈষম্য ও নিপীড়নের আরেকটি অধ্যায় রচনা করবে।”

ভারতীয় সংসদে দ্রুত বিল পাস

ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলটি ইতোমধ্যে লোকসভা (Lok Sabha) ও রাজ্যসভা (Rajya Sabha) উভয় কক্ষে পাস হয়ে গেছে। বুধবার লোকসভায় বিলটি পাস হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজ্যসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে এটি পাস হয়।

বিলটির পক্ষে ভোট পড়ে ১২৮টি এবং বিপক্ষে পড়ে ৯৫টি ভোট। মাত্র ৩৩ ভোটের ব্যবধানে ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি রাজ্যসভায় পাস হয়ে যায়। এখন এটি আইনে পরিণত হতে শুধু রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (Droupadi Murmu) এর সইয়ের অপেক্ষায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মন্তব্য

আসিফ নজরুল (Asif Nazrul) তার মন্তব্যে আরও বলেন, “পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এরাই আবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ভূয়া অভিযোগ তুলে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে।”

এই আইন পাসের প্রেক্ষিতে ভারতে মুসলিম সমাজে ব্যাপক উদ্বেগ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার ও ঐতিহাসিক সম্পত্তি রক্ষায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *