ছেলেধরা সন্দেহে শিশুর সামনে বাবাকে গণপিটুনি

শিশুর আকস্মিক কান্না ঘিরে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে গুজব। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের রামদী ইউনিয়নের তাতারকান্দা এলাকায় তিন বছরের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে রিকশায় যাচ্ছিলেন সোহেল মিয়া। হঠাৎ শিশুটির কান্না শুনে স্থানীয় লোকজনের মনে ছেলেধরা সন্দেহ জাগে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই উত্তেজিত জনতা তাকে রিকশা থামিয়ে বেধড়ক মারধর করে।

ঘটনাটি ঘটে রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকাল ৩টার দিকে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সোহেল ও তার শিশু কন্যা লাইসাকে উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, আহত অবস্থায় সোহেলকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোহেল মিয়া (৩০) কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া সওদাগর পাড়ার বাসিন্দা। স্ত্রী সন্তান নিয়ে তার সংসার হলেও, পারিবারিক কলহ লেগেই থাকে। ঘটনার দিন স্ত্রীর খোঁজে ভৈরবে এক আত্মীয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তিন বছর বয়সী মেয়ে লাইসা। পথে রামদীর তাতারকান্দায় পৌঁছালে লাইসা হঠাৎ কান্না শুরু করে। তখনই জনতা ছেলেধরা সন্দেহে তাকে ঘিরে ধরে এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

রামদী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “লোকজন শিশুটির বাবাকে ছেলেধরা ভেবে ভুল করেছে এবং মারধর করেছে।”

পুলিশও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। কুলিয়ারচর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শুভ আহমেদ জানান, “উদ্ধারের পর সোহেলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার স্ত্রী কিছুদিন ধরে বাচ্চা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়র বাসায় আছেন, সেই খোঁজেই সে যাচ্ছিল।”

স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, সোহেলের পারিবারিক জীবনে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। প্রায়ই তার স্ত্রী সাবিনা আক্তার ঝগড়া করে সন্তান নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যান। যদিও এক সময় তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল, এখন তিনি ফেরি করে প্লাস্টিকের মালামাল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন।

পুলিশি হস্তক্ষেপে উদ্ধার

ঘটনার পরপরই পুলিশ সোহেল ও তার কন্যা লাইসাকে উদ্ধার করে নিরাপদে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়। কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন জানান, “রাত ৯টার দিকে সোহেল ও তার মেয়েকে জিডির মাধ্যমে তার মা, বাবা ও ভাই-বোনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা একেবারেই ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা।”

ঘটনাটি আবারও প্রশ্ন তোলে, সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কত দ্রুত ভুল সিদ্ধান্তের জন্ম দিতে পারে। ছেলেধরা গুজবের ভয়াল রূপ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তারই একটি নির্মম উদাহরণ হয়ে রইল কুলিয়ারচরের তাতারকান্দার এই ঘটনা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *