ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় (Delhi University)-এর অধিভুক্ত লক্ষ্মীবাই কলেজে ক্লাসরুম ঠান্ডা রাখতে দেয়ালে গোবরের প্রলেপ দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। কলেজটির অধ্যক্ষ প্রত্যুষ ভাটসালা (Pratyush Bhatsala) নিজেই গোবর লেপার নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং হাতেকলমে অংশ নিয়েছেন এই কাজে। আর সেখান থেকেই ঝড় বয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি দিল্লি রাজ্য সরকারের অধীনস্থ। ‘প্রাকৃতিক উপায়ে তাপ নিয়ন্ত্রণ’—এই যুক্তিতে অধ্যক্ষ নিজ হাতে এক কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাসরুমের দেয়ালে গোবর লাগান। গোবর লেপার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক শিক্ষক ও অভিভাবকরাও একে ‘অবৈজ্ঞানিক’, ‘মধ্যযুগীয়’ এবং ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে আখ্যা দেন।
একজন শিক্ষক কটাক্ষ করে লেখেন, “আজ গোবর এসেছে, কাল হয়তো গোমূত্রও আসবে! এভাবে কি বিশ্বগুরু হওয়া যায়?” অন্যজনের মন্তব্য, “অধ্যক্ষ যদি এমন আজগুবি কাজে সময় দেন, শিক্ষার্থীরা তাহলে কী শিখবে?”
তবে সমালোচনার ভিড়ে অধ্যক্ষ ভাটসালার কাজকে সাধুবাদ জানানো কিছু কণ্ঠও শোনা গেছে। তাদের মতে, পরিবেশবান্ধব চিন্তা ও কাজের প্রতি অধ্যক্ষের এই নিষ্ঠা প্রশংসাযোগ্য। এ প্রসঙ্গে ভাটসালা জানান, “এটি একটি গবেষণা প্রকল্প। আমাদের উদ্দেশ্য, প্রাচীন পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালে ক্লাসরুম ঠান্ডা রাখার উপায় খুঁজে বের করা।”
তার দাবি, গোবর একটি প্রাকৃতিক তাপ নিরোধক। দেয়ালে লাগালে কক্ষের তাপমাত্রা কমে যায়, যার ফলে পড়াশোনার পরিবেশ উন্নত হয়। গবেষণা শেষে এ নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথাও জানান তিনি।
তবে ছাত্রছাত্রীদের বড় একটি অংশ অধ্যক্ষের এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন (ডিইউএসইউ) (DUSU)-এর সভাপতি রৌণক ক্ষেত্রী (Raunak Khetri) বলেন, “যেখানে এসির প্রয়োজন, সেখানে দেয়ালে গোবর লাগিয়ে ঠান্ডা করার চেষ্টা করাটা শিক্ষার সঙ্গে প্রহসন ছাড়া কিছু নয়।”
বিক্ষোভ জানাতে শিক্ষার্থীরা এক অভিনব পথে হেঁটেছেন—তারা গোবর নিয়ে ঢুকে পড়েন অধ্যক্ষের কক্ষে। ভাইরাল হওয়া ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে দেখা যায়, রৌণক ক্ষেত্রী নিজেই অধ্যক্ষের অফিস ও বাথরুমের দেয়ালে গোবর লেপে প্রতিবাদ জানান।
ক্ষেত্রী আরও জানিয়েছেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ইউজিসি নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হচ্ছে এবং বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে যাতে ক্লাসরুমে এসি বসানো হয়।
এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—বিজ্ঞানের এই যুগে শিক্ষাঙ্গনে প্রাচীন পদ্ধতির এমন ব্যবহার কতটা যুক্তিযুক্ত? পরিবেশবান্ধব চিন্তা প্রশংসনীয় হলেও, তার প্রয়োগ কি এমন বিতর্কের জন্ম দেবে? দিল্লির গরমে ক্লাসরুম ঠান্ডা রাখতে গোবর নয়, চাই প্রযুক্তি—এটাই যেন শিক্ষার্থীদের সরব দাবি।