নিয়োগ বাণিজ্য, বিলাসী জীবন সহ নানা অভিযোগে নিজ দলের মধ্যেই তোপের মুখে সারজিস-হাসনাত-তানভীর

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর ‘বিলাসী জীবনধারা’ এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে দলটির অভ্যন্তরে প্রশ্ন উঠেছে। একইসঙ্গে দলের যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাহউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধেও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে আলোচনা চলছে। এসব ইস্যুতে দলের সাধারণ সভায় জবাবদিহি করতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট নেতাদের। বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করলেও এনসিপি এখন তদন্ত কমিটি গঠনের পথে।

গতকাল শুক্রবার ঢাকার বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রায় ৯ ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় এনসিপির তৃতীয় সাধারণ সভা। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন সদস্যসচিব আখতার হোসেন। এই দীর্ঘ বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন সারজিস ও হাসনাতের জীবনযাপন ঘিরে উদ্ভূত বিতর্ক নিয়ে।

তাঁদের বিলাসী জীবনযাপনের পেছনে আর্থিক উৎস কী—এই প্রশ্ন তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে ঈদের আগে পঞ্চগড়ে সারজিস আলমের দামি গাড়ির বহর নিয়ে প্রবেশ, দামি গাড়ি ব্যবহার, এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া ও নানা আলোচিত ঘটনায় তাঁদের ভূমিকা নিয়ে নেতাদের সন্দেহ প্রকাশ পায়।

সারজিস ও হাসনাত অবশ্য এসব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন। তাঁরা দাবি করেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-পরবর্তী সময়ে অনেকেই তাঁদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন, তাঁরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছেন—তবে কোনো আর্থিক বিনিময় হয়নি। অনেকেই তাঁদের সঙ্গে ছবি তোলেন, পরবর্তীতে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাঁরা যেন জড়িত—এমন ভুল ধারণা সৃষ্টি হয় বলেও অভিযোগ তাঁদের।

তবে সরাসরি আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাহউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে। মো. রাশেদ খান, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, এক ফেসবুক পোস্টে তানভীরের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক নিয়োগ, এনসিটিবি বাণিজ্য ও বিভিন্ন তদবিরে জড়িত থেকে অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ আনেন। সেই পোস্টে সারজিস আলমকেও তাঁর সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সভায় তানভীর এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং যেকোনো তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তবে এই প্রসঙ্গে তাঁকে একাধিকবার ফোন ও বার্তা পাঠানো হলেও তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে, এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দলের ভেতরে বা বাইরে যেই হোক—কাউকে নিয়ে অভিযোগ উঠলে তা তদন্তের মুখোমুখি হতে হবে। এ লক্ষ্যে ‘শৃঙ্খলা ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি, যা রোববার (২০ এপ্রিল) ঘোষণা করা হবে। দলের এক নেতা জানান, অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে দল ব্যবস্থা নেবে, তবে তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নেতাদের পাশে থাকবে দল।

সারজিস আলম বলেন, ‘এই চর্চাটা সব সময় থাকা উচিত। এতে আমাদের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে।’ একইসঙ্গে তিনি অপপ্রচারের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান।

তবে আলোচিত ইস্যুতে হাসনাত আবদুল্লাহর মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। তাঁর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।

দলের এই অভ্যন্তরীণ বিতর্ক ও পদক্ষেপগুলোর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট, এনসিপি নেতৃত্বের ওপর এখন প্রবল চাপ। বিশেষত নতুন ও সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত এই দল যদি বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে চায়, তবে অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা রক্ষার চ্যালেঞ্জটি অবহেলা করার সুযোগ নেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *