এটিএম আজহারের মুক্তিতে বিলম্বে ক্ষুব্ধ জামায়াত, বিচার বিলম্বে ‘বিস্মিত ও ব্যথিত’

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম (ATM Azharul Islam)-এর মুক্তি বিলম্বে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami)। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) হাইকোর্টে আজহারের জামিন শুনানির পর দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার (Mia Golam Porwar) সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা খুবই বিস্মিত এবং ব্যথিত।”

তিনি অভিযোগ করেন, “৫ আগস্টের পর যাঁরা আওয়ামী ফ্যাসীবাদের হাতে অন্যায়ভাবে আটক হয়েছিলেন, তারা সবাই মুক্তি পেয়েছেন। অথচ আজহার এখনো মুক্ত নন।” আজহারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও দাবি করেন জামায়াতের এই নেতা।

পরওয়ার আরও বলেন, “আট মাস কেটে গেল। যাঁরা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছেন, তারা সবাই ব্যথিত। তবে আমরা এখনো হতাশ নই। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ধৈর্য নিয়ে সুবিচারের অপেক্ষায় আছি।” তিনি বলেন, “একজন মানুষকে মুক্তি না দিয়ে সরকার, প্রশাসন ও জনগণ সবাই দায় এড়াতে পারে না।”

আপিল শুনানি ৬ মে

এদিকে, এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আপিল শুনানির জন্য আগামী ৬ মে দিন নির্ধারণ করেছে আপিল বিভাগ (Appellate Division)। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ (Dr. Syed Refaat Ahmed)-এর নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশে জানানো হয়, ওইদিন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আজহারের আপিল শীর্ষে থাকবে।

এর আগে সোমবার (২১ এপ্রিল) বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী (Zubayer Rahman Chowdhury)-র নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ শুনানির জন্য ২২ এপ্রিল দিন ধার্য করেছিল।

২০২৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ আজহারের রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মূল আপিল শুনানির অনুমতি দেয়। এটিই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা, যেখানে রিভিউ থেকে মূল আপিল শুনানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গণহত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ছয় ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধে এটিএম আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ট্রাইব্যুনাল পাঁচটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে।

এরপর ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল বিভাগে খালাস চেয়ে আবেদন করেন আজহারের আইনজীবীরা। তারা ৯০ পৃষ্ঠার মূল আপিল ও ২,৩৪০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্টস জমা দেন।

২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এরপর রিভিউ আবেদন করেন আজহার, যা ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুনানির জন্য গৃহীত হয়।

জামায়াতে ইসলামী বরাবরই এই রায়কে ‘প্রহসনের রায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে। দলটি বলছে, আইন অনুযায়ী বিচার হলে আজহার ন্যায়বিচার পাবেন এবং মুক্তি পেতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *