একক প্রার্থী দেওয়ার কৌশলে ঐক্য পাঁচটি ইসলামপন্থি দলের

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনভিত্তিক একক প্রার্থী দেওয়ার কৌশলগত ঐকমত্যে পৌঁছেছে পাঁচটি ইসলামপন্থি দল। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদ প্রতিরোধ এবং একটি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলগুলো। এই বার্তা দিয়েছেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (Mufti Syed Muhammad Rezaul Karim), যিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির এবং চরমোনাই পীর হিসেবে পরিচিত।

বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংলাপে এই ঐক্য গড়ে ওঠে। অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি এবং খেলাফত মজলিস। এই পাঁচ দলের মধ্যে ধর্মীয় আদর্শে মিল থাকলেও, নির্বাচন ও রাজনীতিতে একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে এ ধরনের সমঝোতা বিরল ঘটনা।

মুফতি রেজাউল করীম বলেন, “আমরা এক বাক্সে ভোট পাঠানোর বিষয়ে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছি। রাজনৈতিক সংস্কার শেষ হওয়ার পরই একটি যৌক্তিক সময়ে জাতীয় নির্বাচন চায় সবাই। ফ্যাসিস্ট, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচার ও জনগণের অর্থ ফেরতের বিষয়েও আমরা একমত হয়েছি।”

নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিতে তিনি বলেন, “এই কমিশন বাতিল না হলে আমাদের আন্দোলন হবে কঠোর। এই বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।”

এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র নেতা মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহারসহ বিশিষ্ট আলেমরা। ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মুসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ জানান, সভায় হৃদতাপূর্ণ পরিবেশে সমকালীন রাজনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ শেষে নিন্মোক্ত পাঁচটি একমত পোষণ করা হয়। সেগুলো হলো-

  1. নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের আসন ভিত্তিক একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে কৌশলগত আলোচনা এগিয়ে নেওয়া।

  2. আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত একটি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র তৈরীর ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, যাতে নতুন করে কোনো ফ্যাসিবাদ কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে।

  3. ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করা।

  4. প্রয়োজনীয় ও মৌলিক সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।

  5. নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল করা।

একই দিনে বিকেল সোয়া ৪টায় ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। এই বৈঠকে অংশ নেয় গণঅধিকার পরিষদ। দু’দল একমত হয় প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী যৌথ কর্মসূচির বিষয়ে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “আমরা যেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, তা অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনের আগে গণহত্যাকারীদের বিচার ও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।”

এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন গণঅধিকার পরিষদের সহসভাপতি ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাকিব হোসেন, অ্যাডভোকেট নুরে এরশাদ এবং হাসান আল মামুন। ইসলামপন্থিদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী আদর্শের মেলবন্ধনে এই আলোচনাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখছেন একটি সম্ভাব্য বৃহৎ রাজনৈতিক জোটের ইঙ্গিত হিসেবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *