কুয়েটের ভিসি ও প্রোভিসিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিলো সরকার

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) চলমান শিক্ষার্থী আন্দোলনের চাপে শেষমেশ সাড়া দিল সরকার। শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন ও দেশজুড়ে বাড়তে থাকা চাপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য (প্রোভিসি)কে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ এক সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সেখানে বলা হয়, কুয়েটের সাম্প্রতিক সহিংস পরিস্থিতি এবং শিক্ষাপ্রক্রিয়া সচল রাখতে দ্রুততম সময়ে ভিসি ও প্রোভিসিকে দায়িত্বমুক্ত করা হচ্ছে।

ঘোষণায় আরও জানানো হয়, “অবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠন করে এ দুটি শূন্য পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে। এ প্রক্রিয়া চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম বজায় রাখতে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে অস্থায়ীভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে।”

চাপের মুখে এই সিদ্ধান্ত

কুয়েটের এই সংকট শুরু হয় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে। ছাত্রদল-যুবদল, স্থানীয় বাসিন্দা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হন। এর জেরে ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম এবং আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু ১৩ এপ্রিল, শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এরপরের দিন, ১৪ এপ্রিল রাতে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এই বহিষ্কারের প্রতিবাদ এবং উপাচার্য অপসারণের একদফা দাবিতে ২২ এপ্রিল বিকেল থেকে ২৯ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন শুরু করেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা এতটাই বেড়ে যায় যে, শিক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা এসে অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও কুয়েটের শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়—ভিসিকে সরে যেতে হবে।

এই বহুমুখী চাপে সরকার অবশেষে ভিসি ও প্রোভিসিকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যা আন্দোলনকারীদের দাবির বড় একটি অংশ পূরণ করেছে। এখন দেখার বিষয়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনশন থেকে সরে আসেন কি না এবং নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া কত দ্রুত সম্পন্ন হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *