রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবে এবার কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল মিয়ানমারের সামরিক জান্তা (Myanmar Junta)। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর (Bangladesh Jamaat-e-Islami) পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (Chinese Communist Party) সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে সেই প্রস্তাবকে সরাসরি ‘সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জান্তা সরকার।
মিয়ানমার জানায়, এই প্রস্তাব তাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। তারা জামায়াতের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং এটিকে ‘রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট যোগাযোগ’ হিসেবে অভিহিত করে। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ‘ইরাবতি’-তে প্রকাশিত খবরে জান্তা সরকারের এ বিবৃতি উঠে আসে।
এছাড়াও, মিয়ানমার ফের রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি শরণার্থী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। জান্তা বলেছে, তারা বারবার স্পষ্ট করেছে যে, মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ থেকে আসা ‘বাঙালি শরণার্থী’দের প্রত্যাবাসনে আগ্রহী, তবে তার আগে প্রয়োজনীয় পরিচয় যাচাই ও নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এর পাশাপাশি তারা রাখাইনে শরণার্থীদের জন্য আবাসন সুবিধাও তৈরি করতে চায় বলে জানানো হয়েছে।
তবে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে অব্যাহতভাবে পরিচয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকার একটি সুপরিচিত বিতর্ককে আবারও উসকে দিয়েছে। বাস্তবে, এই জনগোষ্ঠী প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছে এবং নিজস্ব পরিচয়ে রাষ্ট্রহীন অবস্থায় মানবিক সংকটে দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের পরবর্তীতে সরে আসেন। তিনি জানান, মূলত মানবিক দিক বিবেচনায় চীন সরকারের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছিল, রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দলীয় অবস্থান ছিল না।
মিয়ানমারের জান্তা পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, কুনমিং শহরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে নিয়মিত বৈঠক হয় এবং এই আলোচনা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। সেখানে চীন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে।
সব মিলিয়ে, রোহিঙ্গা সংকটকে ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, যেখানে একটি ইসলামী রাজনৈতিক দলের কূটনৈতিক তৎপরতা ও আন্তর্জাতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।