নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বান্দ্বিক অবস্থান সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এনসিপির মতে, সমাজ বনাম রাষ্ট্র এবং ধর্ম বনাম নারীর এক ধরনের মুখোমুখি অবস্থান তৈরির ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
আজ সোমবার রাতে দলের যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর গঠিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ২০২৫ সালের ১৯ এপ্রিল তাদের প্রস্তাবনা পেশ করে। তবে, এই কমিশন ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ এর আওতায় ছিল না, ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়ার সুযোগ হয়নি। এর ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে প্রস্তাবনা নিয়ে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে।
এনসিপির দাবি, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মধ্যে সমাজের সব অংশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব হয়নি। সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অখণ্ডতাকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি, নাগরিকদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নীতি প্রণয়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বর্তমান কমিশনের কিছু সুপারিশ রাষ্ট্রকে জনগণের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয়।
এনসিপি মনে করে, যেসব বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে, সেসব ইস্যুতে সকল প্রতিনিধিত্বশীল অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা প্রয়োজন।
নারীর মর্যাদা ও অধিকার বাস্তবায়নে নিজেদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে এনসিপি জানায়, প্রস্তাবনার সমালোচনার নামে যেসব সমাবেশ থেকে নারীদের প্রতি শ্লেষাত্মক ও অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানায় তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রাম এবং বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সকল শ্রেণি, পেশা, ধর্ম ও বর্ণের নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। নারীদের নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের মাধ্যমেই পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি সম্ভব হয়েছে। এই ইতিহাস ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই বলেও হুঁশিয়ারি দেয় এনসিপি।
জাতীয় নাগরিক পার্টি নারীর স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং সামাজিক সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে ঘোষণা দেয়—নারীদের সঙ্গে নিয়েই তারা নতুন বাংলাদেশের পথচলায় অঙ্গীকারবদ্ধ।