ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অম্রিতসারে ফের চালু করা হয়েছে ব্ল্যাকআউট প্রটোকল। বুধবার গভীর রাতে শহরের আত্তারি সীমান্ত এলাকা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাওয়ার পরই এই সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন। রাতেই শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উদ্বেগ ও গুজব।
বার্তা সংস্থা এএনআই (ANI) জানিয়েছে, অম্রিতসার বিভাগীয় প্রশাসন ‘সর্বোচ্চ সতর্কতা’ অবলম্বন করে সবাইকে ঘরের ভিতরে থাকতে বলেছে এবং নির্দেশ দিয়েছে যেন কেউ ঘরের আলো জ্বালিয়ে না রাখে কিংবা বাইরে ভিড় না জমায়। প্রশাসনের দাবি, এটি একটি পূর্বসতর্কতামূলক ব্যবস্থা, যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো যায়।
স্থানীয়দের মধ্যেও এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ফেসবুকে অনেকেই আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। পি এন শর্মা নামের একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “আত্তারি সীমান্ত এলাকায় বিকট শব্দ শোনা গেছে।” আরেকজন, আমারবীর সিং লিখেছেন, “এটি কোনো সনিক শব্দ ছিল না, বরং একটি বড় বিস্ফোরণ। শব্দে বাড়ি কেঁপে উঠলে ঘুম ভেঙে যায় আমার।”
এই সময়েই জম্মু-কাশ্মির সীমান্ত ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম যেমন নিউজ ১৮ (News18) জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। তবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বা বিমান বাহিনী দ্বারা হামলার কোনো নিশ্চিত তথ্য ভারতীয় প্রশাসনের তরফ থেকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, এর ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ (Shehbaz Sharif) এক জাতির উদ্দেশে ভাষণে ভারতের ওপর পাল্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, “গতরাতে ভারত আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে বড় ভুল করেছে। তাদের এর মূল্য দিতে হবে।” শেহবাজ দাবি করেন, পাকিস্তানি প্রতিক্রিয়া ছিল “নিষ্পত্তিমূলক”, এবং ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে, কয়েকজন সেনা সদস্যকে বন্দিও করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভারতের হামলায় পাকিস্তানে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সাত বছরের একটি শিশুও ছিল। “আমরা শহীদদের পরিবারের পাশে আছি,” বলেন তিনি। পাকিস্তানি সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই (DGFI)-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী অবশ্য নিহতের সংখ্যা ৩১ বলে উল্লেখ করেন।
ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের ঘটনায় পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, “তারা অসাধারণ দক্ষতা ও সাহসিকতা দেখিয়েছে। আমরা তাদের বীরত্বকে স্যালুট জানাই।”
ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিশোধের হুমকি দিয়ে আহমেদ শরীফ বলেন, “যেসব রক্ত ঝরেছে, তার প্রতিটি ফোঁটার বদলা নেওয়া হবে। ভারত একটি কাপুরুষ শত্রু— যারা নিরস্ত্র বেসামরিকদের ওপর হামলা চালায়।”
তবে জম্মু-কাশ্মিরে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে শেহবাজ শরীফ বলেন, “ভারত কিছু করেও কাশ্মিরের বাস্তবতা পরিবর্তন করতে পারবে না।”
বর্তমানে অম্রিতসারে ব্ল্যাকআউট ও সীমান্তে উত্তেজনার আবহে দুই দেশের মধ্যে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, যার ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই অনিশ্চিত।