‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়েও তা রক্ষা করা কঠিন’—এই কথায় শুরু হওয়া এক আবেগঘন ফেসবুক পোস্টে রাষ্ট্রের জটিল রাজনীতিতে নিজের অবস্থান ও সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ । সরাসরি নাম না করলেও ইঙ্গিতপূর্ণভাবে তুলে ধরেছেন নিজের দায়িত্ব, দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক সংঘাতের বাস্তবতা।
এই পোস্টে তিনি জানান, রাজপথের সংগ্রাম তাকে আকর্ষণ করে, এমনকি মাঝে মাঝে মনে হয় সবকিছু ছেড়ে রাজপথেই ফিরে যান। কিন্তু তিনি থেকে যাচ্ছেন, কারণ তিনি নিজেকে মনে করেন “গণ-অভ্যুত্থান (People’s Uprising)”-এর পাহারাদার। এই আন্দোলনের ভয়েসকে তুলে ধরাই এখন তার দায়িত্ব, যদিও সেই লড়াই অনেক সময় চোখে দেখা যায় না বা কানে শোনা যায় না।
পোস্টে উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, সরকারে থাকা যেন এখন দুইধার বিশিষ্ট তলোয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকার মতো। সরকার কোনো ভুল করলে—even যদি সেটি তাদের এখতিয়ারে না পড়ে—তবুও জনতার কাঠগড়ায় তাকেই দাঁড়াতে হয়। আবার ছাত্র-জনতা মাঠে নামলে রাষ্ট্রের ভরকেন্দ্রগুলো তাকেই সন্দেহ করে, টার্গেট করে। তিনি বলেন, “স্টাবলিশমেন্ট (Establishment)” মনে করে, সব কিছুই যেন তারা করছেন। বিশেষ করে জুলাই প্রশ্নে আপোষ না করায় ক্ষমতার অনেক অংশের চক্ষুশুলে পরিণত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্র অনেক বড় এবং জটিল জায়গা। এখানে কোনো কিছু বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন।” তবুও আশার কথা হলো, এই উপদেষ্টা পরিষদ নানা বাধার পরও ছাত্র-জনতার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে এবং গণরায়ের বাস্তবায়ন করতে পারছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “যতদিন এই উপদেষ্টা পরিষদ জুলাই আন্দোলনের ভয়েসকে গুরুত্ব দিবে, ততদিনই আমি এখানে আছি। শহীদদের পক্ষ থেকে সরে গেলে আমার এখানে আর কোনো কাজ নেই।”
পোস্টের শেষদিকে উপদেষ্টা এক রকম হুঁশিয়ারি দেন, বলেন—আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়া জুলাই জনতার আরেকটি বিজয়। যেসব স্টাবলিশমেন্ট সদস্যরা আওয়ামী সমর্থক, তারা যেন সতর্ক থাকেন। সামান্য অসতর্কতা তাদের পতনের কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পোস্টের এক নোটে তিনি সাম্প্রতিক কিছু ‘ফটোকার্ড’ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেখানে দাবি করা হয়েছিল, আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ ভাই (Mahfuz Bhai) নাকি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এই অভিযোগকে তিনি সম্পূর্ণ মিথ্যা আখ্যা দিয়ে বলেন, মাহফুজ ভাই শুরু থেকেই নিষিদ্ধের পক্ষে এবং উপযুক্ত কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন। “ভেতরের ডিটেইলে গেলে গোপনীয়তার শপথ ভঙ্গ হবে, তাই এখানেই থামছি”—এই বক্তব্যে তিনি ইঙ্গিত দেন, আরও অনেক তথ্য রয়েছে যা এখনই প্রকাশ করা ঠিক হবে না।
এই পোস্ট রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য, উপদেষ্টাদের চাপ, এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের মতো স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে এমন সরাসরি উচ্চারণ সচরাচর দেখা যায় না।
