ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain) মেয়র হিসেবে আদালতের রায়ে জয়ী হলেও এখনো সেই রায় বাস্তবায়নের পথে একাধিক আইনি জটিলতার ব্যাখ্যা চাইছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (Local Government Ministry)। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এটি কার্যত ইশরাকের মেয়র হওয়া ঠেকানোরই একটি প্রশাসনিক প্রয়াস।
আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে আইন ও বিচার বিভাগ (Law and Justice Division)-এর সচিব বরাবর। চিঠির শিরোনাম ‘মতামত প্রদানসংক্রান্ত’ হলেও এর ভাষা ও উপস্থাপন থেকে স্পষ্ট, বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় বাস্তবায়নের আগে আইনগত বাধা বা ফাঁকফোকর রয়েছে কি না, তা যাচাই করছে মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন কমিশন ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এই রায়ের ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৬ অনুযায়ী কোনো আইনগত জটিলতা রয়েছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
তবে এখানেই প্রশ্ন উঠছে: যদি কমিশন আপিল না করেই ইশরাকের পক্ষে রায় কার্যকর থাকে, তবে মন্ত্রণালয় কেন নতুন করে আইনি মতামত চাইছে?
চিঠির আরও একটি অংশে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন এই মামলায় বিবাদী হলেও আদালতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি, ফলে মামলাটি একতরফাভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে। অথচ হাইকোর্ট এর আগে মামলার আরজি সংশোধন সংক্রান্ত একটি রায় দিয়েছিল, যা ট্রাইব্যুনাল আমলে নেয়নি। বর্তমানে এই রায় হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ হওয়ায়, তাতেও একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
চিঠিতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের একটি অনুরূপ মামলার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেখানে ট্রাইব্যুনাল একই ধরনের আবেদন খারিজ করে দেয়। অর্থাৎ, দুটি ভিন্ন সিটির ক্ষেত্রে আদালতের রায় ভিন্ন হওয়া নিয়েও স্পষ্টত প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
সবশেষে, মেয়রদের মেয়াদকাল ও দায়িত্ব গ্রহণ সংক্রান্ত আইনি জটিলতাও উত্থাপন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, যা কার্যত ইশরাক হোসেনের মেয়র হওয়ার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত বা জটিল করার ইঙ্গিত দেয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চিঠির মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে ইশরাকের মেয়র পদে অভিষেক রুখে দেওয়ার একটি কৌশলী প্রশাসনিক চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। কারণ আদালতের রায়, কমিশনের নীরবতা এবং বিদ্যমান আইনের ভাষা—সবই এখন ইশরাকের পক্ষে থাকলেও, বাস্তবে তাকে মেয়র পদে বসানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।