সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি রাজনৈতিক মন্তব্যের কারণে চাকরি হারালেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মচারী। আলোচিত এই ঘটনা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে দেশের প্রশাসনিক অঙ্গনে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. নাজমুল হুদা বরখাস্ত হয়েছেন গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক সারজিস আলমের একটি ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করার জেরে। ১৯ ফেব্রুয়ারি নাজমুল হুদা ওই পোস্টে মন্তব্য করেন, আর পরদিনই, ২০ ফেব্রুয়ারি, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সৈয়দা সাদিয়া নূরীয়া (Syeda Sadia Nuria) স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পোস্টে নাজমুল লিখেছিলেন, ‘আপনারা স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের সচিব বানানোর জন্য ডিও দেন, আবার বড় বড় কথা বলেন।’ এই মন্তব্যকেই ‘জাতীয় ঐক্য চেতনার পরিপন্থী’ আখ্যা দিয়ে তাকে শুধু সাময়িক নয়, বরং স্থায়ী বরখাস্তের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। ১৩ মার্চ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, এ ধরনের বক্তব্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে এবং জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম। ফলে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী তা ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য।
তবে এ ঘটনায় নাজমুল হুদা একা নন—সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তর (Department of Fisheries)-এর পাঁচ কর্মকর্তা শুধু ‘স্যাড রিয়েক্ট’ দেওয়ার জন্য শোকজ হয়েছেন। সেই আলোচনার মাঝেই নাজমুল হুদার বরখাস্তের খবর নতুন করে সামনে আসে।
জানতে চাইলে, দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব সৈয়দা সাদিয়া নূরীয়া জানান, ‘অফিশিয়াল সিদ্ধান্তে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমি শুধু ডেস্ক অফিসার হিসেবে স্বাক্ষর করেছি।’
এই ঘটনায় সরাসরি জড়িত না হলেও, আলোচনার কেন্দ্রে থাকা সারজিস আলম নিজেই মন্তব্য করেছেন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য (Pinaki Bhattacharya)-এর একটি পোস্টে। ১৭ মে পিনাকী একটি পোস্ট দেন যেখানে তিনি নাজমুল হুদার বিভাগীয় মামলার এজাহারের ছবি যুক্ত করে প্রশ্ন করেন, ‘সারজিস আলমকেও স্যার ডাকতে হবে নাকি এখন?’ সেই পোস্টে সারজিস মন্তব্য করেন, তিনি নাজমুল হুদার সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন এবং শাস্তি প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করবেন। এমনকি চাকরি ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়াও চলমান বলে জানান।
তবে ভিন্ন অভিমত নাজমুল হুদার। তার ভাষায়, “সারজিস আলম যোগাযোগ করেছে। তবে সে ভালোভাবে বললে বরখাস্তের আদেশ বাতিল হতো।” তিনি আরও বলেন, সচিব তোফাজ্জেল হোসেনের চাপে কমেন্টটি পরে মুছে ফেলেন।
ঘটনার সময় এবং পরিপ্রেক্ষিতে একে প্রশাসনিক ‘অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ বলেও সমালোচনা উঠছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যেখানে একটি মন্তব্য বা একটি ‘রিয়েক্ট’ সরকারি চাকরির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে ফেলছে—সেই বাস্তবতা নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে রাষ্ট্রের সহনশীলতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে।