শেখ হাসিনাসহ ৩৯৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করলেন বিএনপি নেতা

টাঙ্গাইলে কথিত ডামি নির্বাচন ও ভোট কারচুপির অভিযোগে দায়ের করা আলোচিত মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিএনপি নেতা কামরুল হাসান (Kamalul Hasan)। এই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। তার পাশাপাশি আসামির তালিকায় ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল (Kazi Habibul Awal), স্থানীয় পাঁচ সাংবাদিক এবং অজ্ঞাত আরও ১৫০–২০০ জন।

বুধবার (২১ মে) ভূঞাপুর উপজেলা আমলি আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমেলিয়া সিরাজাম (Rumelia Sirajam) মামলার বাদী কামরুল হাসানের আবেদন গ্রহণ করে মামলাটি বাতিলের আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইল আদালতের পরিদর্শক মো. লুৎফর রহমান।

আদালতের নথি অনুযায়ী, মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল গত ১৯ মে। বাদী কামরুল হাসান টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। তিনি মামলায় স্থানীয় পাঁচ সাংবাদিককে আসামি করায় গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে পড়েন। এরপর মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার অনাপত্তিপত্র দাখিল করেন।

মামলার আইনজীবী আবু রায়হান খান (Abu Raihan Khan) বলেন, “২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ভুয়া ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন আখ্যা দিয়ে এই মামলা দায়ের করেছিলেন কামরুল হাসান। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মামলা প্রত্যাহার করেন।”

১৯ মে দায়েরকৃত মামলায় শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে মোট ১৯৩ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০–২০০ জনকে যুক্ত করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ভারতীয় নির্দেশে শেখ হাসিনা ও অন্যান্য আসামিরা যোগসাজশে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেন।

বাদীর দাবি, তিনি ভূঞাপুরের অলোয়া ইউনিয়নের ভারই উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে আওয়ামী লীগ (Awami League) ও ছাত্রলীগ (Chhatra League) সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা চালান, মারধর করেন এবং তাকে হত্যার হুমকি দেন। সেই সঙ্গে পুলিশের সহযোগিতায় ভোট বাক্স জালিয়াতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তানভীর হাসান ছোট মনির (Tanvir Hasan Chhoto Monir) কে বিজয়ী করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাদী কামরুল হাসান বলেন, “উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম মোস্তফা মামলাটি প্রত্যাহার করতে বলেছেন। দলের ওপরমহলের নির্দেশেই আমি মামলা তুলে নিয়েছি।”

ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা জানান, “মামলা প্রত্যাহারের কথা শুনেছি, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাদী নিজেই নিয়েছেন।”

তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল জানান, “মামলার ব্যাপারে জেলা বিএনপির সঙ্গে কোনও পরামর্শ হয়নি। কেন করা হলো, আবার কেনইবা প্রত্যাহার করা হলো, তা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত শেষে দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন বলেন, “এ ধরনের মামলা করার আগে জেলা বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমরা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেব।”

মামলার জটিলতা এবং নেতাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের মধ্যেই শেষমেশ কামরুল হাসান আনুষ্ঠানিকভাবে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। আদালত মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ১৩ আগস্ট নির্ধারণ করেছে। যদিও তা বাতিল হওয়ায়, বিষয়টির আইনি ধারাবাহিকতা এখানেই শেষ হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *