রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের ভূমিকা ও অঙ্গীকারভঙ্গ নিয়ে। বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং নাগরিক সমাজের কণ্ঠস্বর জুলকারনাইন সায়ের (Julkarnine Sayer) এক ফেসবুক পোস্টে সম্প্রতি তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু সদস্যের কর্মকাণ্ডকে, যা তিনি ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের একদিন পর, ৯ আগস্ট সারজিস আলম (Sargis Alam) একটি উল্লেখযোগ্য স্ট্যাটাস দেন, যেখানে লেখা ছিল, “নাহিদ এবং আসিফের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ দেশের মানুষের স্বার্থে একধরনের আত্মত্যাগও বটে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারে থাকার ফলে তারা সামনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হবেন।”
জুলকারনাইন সায়ের ব্যাখ্যা করেন, সারজিসের স্ট্যাটাসের পেছনে ছিল সেই সময়কার সম্মিলিত রাজনৈতিক ঐক্যমত্য—যে অন্তর্বর্তী সরকার হবে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য, এবং এর সদস্যরা পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এটি ছিল সেই সময়কার আন্দোলন ও ঐকমত্যের ভিত্তি।
তবে এখন বাস্তবতা ভিন্ন। জুলকারনাইন বলেন, “নাহিদ উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন দল গঠন করেছেন। তিনি যে নির্বাচনে অংশ নেবেন, তা এখন স্পষ্ট। আসিফও প্রার্থী হবেন, সেটিও মোটামুটি নিশ্চিত। আর মাহফুজুর রহমান (Mahfuzur Rahman), যিনি এনসিপি গঠনের মূল কারিগর, তিনিও কি নির্বাচনে নামবেন না? এই প্রশ্ন উঠছে স্বাভাবিকভাবেই।”
তিনি সতর্ক করেন, এই প্রবণতা যদি রোধ না করা যায়, ভবিষ্যতে কোনো জাতীয় ঐকমত্যই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তিনি বলেন, “জাতির সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি নৈতিক বিচ্যুতি—এ একপ্রকার বিশ্বাসঘাতকতা এই গণ অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সাথেই। যারা ক্ষমতার মোহে নিজস্ব অবস্থান পাল্টান, তারা কি সত্যিই জনগণের আস্থার যোগ্য?”
সায়েরের মতে, এই আচরণ ‘জুলাই স্পিরিট’—অর্থাৎ এক সৎ, স্বচ্ছ এবং আত্মত্যাগী রাজনীতির মডেল—এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদি এখনই এই প্রবণতা থামানো না যায়, তাহলে ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে।”