এই পরিস্থিতি ড. ইউনূস নিজেই তৈরি করেছেন। তিনি মূলত নৈরাজ্যবাদী একদল ষড়যন্ত্রকারীদের হাতের মুঠোর ভিতরে গিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছিলেন।
এটা হচ্ছে বিপদজ্জনক এক পরিস্থিতি।
এই নৈরাজ্যবাদীরা, জাশি ও এনসিপির সঙ্গে মিলে সরকারের সঙ্গে বিশেষ করে ড. ইউনূসের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও বিএনপির দুরত্ব তৈরি করেছে। ৫ আগস্টের পর পর এদের মূল লক্ষ্য ছিল বিএনপি ঠেকাও। নানাভাবেই তারা নির্বাচন পিছানোর ফন্দি ফিকির করেছেন। দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার অভিলাষ নিয়ে তারা সংস্কার করতে হবে, নানা কাজ করতে হবে বলে অনির্বাচিত সরকারের মেয়াদকে দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছে।
কিন্তু খুব বেশি সুবিধা করতে পারছিলেন না বিএনপি ও জেনারেল ওয়াকারের জন্য। যে কারণেই হোক জেনারেল ওয়াকার শুরু থেকেই নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে ছিলেন। তিনি ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেন।
বিএনপি কিন্তু কখনোই নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে খুব বেশি চাপ দেয়নি। তারা নির্বাচনী রোড ম্যাপের কথা জানতে চেয়েছে বারবার।
বিএনপিকে নানাভাবে আটকানো গেলেও নির্বাচনের অবস্থান নিয়ে সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা কঠিন এই দুর্বল সরকারের জন্য। এ জন্যই তারা সেনাপ্রধানকে সরানোর উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসাবে অজানা ও অপরিচিত খলিলুর রহমানকে সরকারের পদে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রথমে রোহিঙ্গা বিষয়ক পদে থাকলেও পরে নিরাপত্তা উপদেষ্টার মতো বড় ও স্পর্শকাতর পদে নিয়ে আসা হয়। এরপরই খেলা শুরু হয়।
সেনাপ্রধানকে সরিয়ে নিজস্ব লোক আনতে পারলে নির্বাচনের পরিবেশ নাই, সংস্কারের পরে নির্বাচন হবে- এসব নানা কথা নতুন নিয়োগকৃত সেনাপ্রধানকে দিয়ে বলিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া সহজ হতো সরকারের পক্ষে।
তাই গত কয়েকদিন ধরেই জেনারেল ওয়াকারকে সরিয়ে দেওয়া বা তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্যু এর নানা কথাবার্তা ভেসে বেড়াচ্ছিল। সম্ভবত মি. খলিলের উদ্যোগে জেনারেল ওয়াকারকে সরিয়ে পিএসও ওয়ান জেনারেল কামরুলকে সেনা প্রধান পদে নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়।
অসমর্থিত সূত্র মতে, জেনারেল ওয়াকারকে সরিয়ে দেওয়ার চিঠিও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এটা আরো পরিস্কার হয় নৈরাজ্যবাদীদের সাম্প্রতিক লেখা বিভিন্ন পোস্ট ও ইউটিউবের কথাবার্তায়। তারা পরিস্কার করেই বলছিল সেনাবাহিনী সংস্কারের পক্ষে চলে আসবে।
এই খবর ঢাকা সেনানিবাসে যাওয়ার পরপরই সেনা কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। জেনালের ওয়াকার মুভ করেন। কয়েকদিন আগে গিয়ে তিন বাহিনীর প্রধান ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানেও নানা কথাবার্তা হয়। আর এর চূড়ান্ত বহিপ্রকাশ হচ্ছে গতকালের দরবার ও সেখানে সেনা প্রধানের বক্তব্য।
জেনারেল ওয়াকারকে সরিয়ে দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াই ড. ইউনূস অনুমোদন করেছেন। তার অজ্ঞাতে কিছুই হয়নি। এখানে তিনি পুরোপুরি বাজে লোকের খপ্পরে পড়েছিলেন। প্রথমত ৫ আগস্টের পর জেনারেল ওয়াকার সেনাবাহিনীর মধ্যে জনপ্রিয় এবং শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। তিনি নির্বাচনের পক্ষে থাকায় বিএনপিও তাকে সমর্থন করছে।
বিএনপি ও সেনাবাহিনীকে পাশ কাটিয়ে সেনানিবাস ও সেনানিবাসের বাইরে জনপ্রিয় একজন সেনাপ্রধানকে কতিপয় অর্বাচীনের পরামর্শে সরানোর উদ্যোগ নেয়া ড. ইউনূসের জন্য মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি।
তিনি এই খেলায় হেরে গেছেন। যে কারণে তিনি আর থাকতে চাইছেন না। পুরো ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে পড়ায় শুধু ড. ইউনূস না এই খেলায় জাশি, এনসিপি ও নৈরাজ্যবাদীদের চরম পরাজয় হয়েছে।
নিজেদের পরাজয় ঢাকতে এখন তারা প্রচার করছে, বিএনপির বার নির্বাচন নিয়ে কথা বার্তা বলা, ইশরাককে মেয়র পদে শপথ পড়ানোসহ নানা কাজে বিরক্ত হয়ে ড. ইউনূস পদত্যাগ করতে চাইছেন।
কিন্তু যেভাবে সেনাসদরে দরবারে যে ভাষায় সরকারের সমালোচনা করা হইছে তারপর আর এই সরকার থাকতে পারে না। জেনারেল ওয়াকারের বিরুদ্ধে ক্যু করতে গিয়ে নিজেরাই ক্যু এর শিকার হইছেন।
আর এই সরকার গত ৯ মাসে এমন কিছু করে নাই যে জনসাধারণ খুশি থাকবে। আম্লীগের বিচার করতে পারেনি, নিষিদ্ধের নামে নাটক করছে, সরকারের উপদেষ্টরা আম্লীগের মতই দুর্নীতি মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর সংস্কারের মূলা ঝুলিয়ে নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
সব মিলিয়ে নানাভাবে উধোর পিণ্ডি বিএনপির ঘাড়ে চাপাতে চাইলেও সেনাপ্রধান ওয়াকারের বিরুদ্ধে সরকারের ভিতর থেকেই ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ড. ইউনূসসহ এই সরকারের সবাই বিপদে আছে।
সাংবাদিক মারুফ মল্লিকের ফেসবুক পোষ্ট থেকে নেওয়া