আসিফ মাহমুদের পক্ষপাতমূলক আচরণ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে: প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain)-এর শপথ গ্রহণ বিলম্বিত হওয়া এবং নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (Bangladesh Nationalist Party – BNP)। দলটির দাবি, এসব ঘটনার পেছনে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পক্ষপাতমূলক ভূমিকা রয়েছে, যা সরাসরি সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

শনিবার রাতে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিএনপির একটি চার সদস্যের প্রতিনিধি দল এই অভিযোগ তুলে একটি লিখিত চিঠি হস্তান্তর করে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (Dr. Khandaker Mosharraf Hossain)। চিঠিতে বলা হয়, জনগণের প্রত্যাশা ও জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দেশ পরিচালিত হলেও, বাস্তবে কিছু কর্মকাণ্ডে সেই নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে পড়ছে।

বিএনপির ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে এমন এক চিত্র ফুটে উঠেছে, যা তাদের মতে নিরপেক্ষতার মানদণ্ড থেকে বিচ্যুত। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার কার্যক্রম তাদের দৃষ্টিতে “পক্ষপাতমূলক” এবং একপেশে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রমাণ দিচ্ছে। এমন অবস্থায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে’ ফাটল ধরতে শুরু করেছে এবং এটি ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। দলটি মনে করে, সরকারকে এ ধরনের বিতর্কিত উপদেষ্টাদের থেকে মুক্ত করতে হবে, যাদের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে নিরপেক্ষ সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

বিএনপি তাদের লিখিত বার্তায় আরও জানায়, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সরকার সংস্কার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে একযোগে এগিয়ে নিতে পারে। তবে তা করতে হলে সর্বোচ্চ সততা, নিরপেক্ষতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের গঠন নিয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি না থাকলেও, সম্প্রতি একদলীয় চাপের মুখে প্রতিষ্ঠানটির সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দলটি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন নিয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট প্রকাশিত হলেও, মেয়র ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণে বিলম্ব এবং তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ করার ঘটনা দলটির কাছে “অন্যায় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” মনে হয়েছে। চিঠিতে এও দাবি করা হয় যে, সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, এবং এজন্য অযথা ব্যাখ্যার আশ্রয় না নিয়ে যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, “জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইতোমধ্যেই বিতর্কিত হয়েছেন, তাকে অব্যাহতি প্রদান করা জরুরি।” এ ছাড়া যেসব উপদেষ্টার সঙ্গে কোনো নতুন রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা প্রচলিত আছে, তাদেরও উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

একই সঙ্গে বিএনপি একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব হয়। দলটির মতে, এটাই এখন দেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। অন্যথায় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলেও সতর্ক করেছে বিএনপি।

চিঠির শেষাংশে বিএনপি বলেছে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং তা নির্বাচন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি চলতেই পারে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত যেন স্বেচ্ছাচারিতা বা চাপের ফলে না হয়, সে ব্যাপারে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার নামে অসাংবিধানিক পন্থা গ্রহণের প্রবণতা রোধ করাই এখন সরকারের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *