গণঅধিকার পরিষদ (Gono Odhikar Parishad)–এর সভাপতি নুরুল হক নুর (Nurul Haque Nur) রোববার রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বৈঠকে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকা দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে অপসারণ বা পদত্যাগে রাজি করানো জরুরি। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট নির্বাচন সময়সূচি ঘোষণার দাবিও তোলেন তিনি।
নুর বলেন, “যারা সরকারের সুবিধাভোগী, তাদের উপদেষ্টা পদে রাখা যৌক্তিক নয়। জনমতেও দেখা যাচ্ছে, তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা প্রশ্নবিদ্ধ।” এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, এই দুই উপদেষ্টা আন্দোলনকারী ছাত্রনেতা ছিলেন, পরে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং বর্তমানে সেই দল সরকারঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
তিনি জানান, এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস (Dr. Yunus) সচেতন থাকলেও এখনো নির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। “আমরা তাঁকে বোঝাতে চেয়েছি, পদত্যাগ না করলে অপসারণের বিকল্প নেই,” বলেন নুর।
ঢাকার দুই সিটির অচলাবস্থাও আলোচনায় উঠে এসেছে। বিশেষ করে উত্তরের প্রশাসকের বিরুদ্ধে হিযবুত তাহরীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এবং দক্ষিণের নির্বাচন ঘিরে বির্তকের বিষয়গুলো তুলে ধরেন নুর। তিনি বলেন, “সরকার যেন এসব বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।”
সামরিক বাহিনী প্রসঙ্গে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নুর বলেন, “দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীকে নিয়ে অপপ্রচার চলছে। সরকার যেন তাদের সঙ্গে আস্থা ও বোঝাপড়ার সম্পর্ক বজায় রাখে।” পাশাপাশি প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে কার্যকর যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, “অনেক রাজনৈতিক দল অভিযোগ করেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের সঙ্গে তারা দেখা করতে চাইলেও সাড়া পান না। এটি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে।”
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর এবং করিডর ইস্যু নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন নুর। তার মতে, “এগুলো জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়। সরকার যেন কোনো তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত না নেয়।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে নুর বলেন, “সরকার ডিসেম্বর থেকে জুনের সময়কালকে নির্বাচনের সময়সীমা হিসেবে উল্লেখ করলেও, তা অত্যন্ত অস্পষ্ট। এ সময়ে রোজা, ঈদ, কোরবানি, ইজতেমা— সবকিছু রয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট মাস ঘোষণা না করলে জনগণ ও দলগুলোর প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন হবে।”
তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নির্বাচনের জন্য অন্তত একটি নির্দিষ্ট মাস উল্লেখ করা হোক। তবেই সুশৃঙ্খল প্রস্তুতি সম্ভব হবে।” তিনি আরো বলেন, “ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা এখনো সমর্থন করি, তবে জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হলে আরও স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতা দরকার।”
সরকার যদি কোনো ধরনের ‘অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক চাপ বা ষড়যন্ত্র’ অনুভব করে, তবে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দেন নুরুল হক নুর।