চলমান রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অস্বচ্ছ নেতৃত্ব নিয়ে মুখ খুলেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক (Saiful Haque)। রবিবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস (Yunus)-এর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে সাইফুল হক জানান, গেলো কয়দিনের ঘটনাবলীর কারণে “প্রধান উপদেষ্টার মন খারাপ ছিল। এজন্য তিনি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।”
তবে সেই সংকটে সবাই মিলে ইউনূসকে আস্থা ও সমর্থনের বার্তা দিয়েছেন বলে জানান তিনি। “মাঝনদীতে মাঝি বদলানো হয় না”—এই প্রবাদ উল্লেখ করে সাইফুল বলেন, “আমরা তার সরকারের ওপর আস্থা রাখতে চাই।”
নেতৃত্বে সমন্বয়হীনতা ও নিরপেক্ষতার অভাব
সাইফুল হক অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেকক্ষেত্রেই দলনিরপেক্ষ আচরণ করতে পারছে না। “এক সরকারের মধ্যে অনেক সরকার আমরা দেখতে চাই না। উপদেষ্টারা একেক সময় একেক কথা বলছেন। এতে নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট”—বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সরকার যদি সত্যিই নিরপেক্ষ আচরণ না করে, তাহলে তা গণবিশ্বাস নষ্ট করবে। সরকারকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ এখনই ঘোষণা করা উচিত।
‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে সরাসরি আপত্তি
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রস্তাবিত ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল আরও জোরালো। সাইফুল হক বলেন, “জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনও সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া নেওয়া উচিত নয়। করিডোর ও বন্দরের মতো বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত না নিতে বলেছি।” তাঁর মতে, সবকিছু একা সরকারকেই করতে হবে—এমন দৃষ্টিভঙ্গি ক্ষতিকর।
বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বিষয়ে কঠোর বার্তা
ছাত্র উপদেষ্টাদের মধ্যে যাঁরা বিতর্কিত, তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টার ওপর ছেড়ে দেন সাইফুল হক। তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব পক্ষকে নিয়ে কিভাবে এগোবেন, তা আপনাদের ঠিক করতে হবে।”
নির্বাচন বিষয়ে জনগণের প্রতীক্ষা ও আস্থার আহ্বান
নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ গত ১৬ বছর ধরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা যৌক্তিক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। জনগণ এবার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়।”
এক মাসের মধ্যে একটি ‘জাতীয় সনদ’ ঘোষণার দাবিও জানান তিনি, যাতে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হয়।
সাইফুল হকের এই বক্তব্যে একটি জটিল রাজনৈতিক বাস্তবতার চিত্র উঠে এসেছে—যেখানে সরকার, রাজনৈতিক দল এবং জনগণের আস্থার দ্বন্দ্ব এক নবতর মোড়ে পৌঁছেছে। ড. ইউনূসের পদত্যাগ ভাবনার পেছনে যে মানসিক চাপ এবং আস্থার ঘাটতি রয়েছে, তা প্রথমবারের মতো স্পষ্টভাবে সামনে আনলেন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা।