সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে উত্তাল বিক্ষোভ

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়জুড়ে বইছে বিক্ষোভের ঝড়। সোমবার (২৬ মে) সকাল থেকে অসন্তোষের আগুনে জ্বলছে দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের নেতৃত্বে কর্মচারীরা একযোগে আন্দোলনে নেমেছেন।

সকাল ১১টার দিকে ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে শুরু হয় প্রধান বিক্ষোভ মিছিল, নেতৃত্বে ছিলেন পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর এবং মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ। কিছুক্ষণ পরেই আন্দোলনে যোগ দেন পরিষদের অন্য অংশের নেতা মো. নূরুল ইসলাম ও মুজাহিদুল ইসলাম। দু’পক্ষ একত্রিত হয়ে গর্জে ওঠে সরকারি চাকরিজীবীদের স্বার্থ রক্ষায়।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কর্মচারীদের মুখে ছিল আগুন ঝরানো স্লোগান— ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘অবৈধ কালো আইন, বাতিল কর’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’। সচিবালয়ের ভেতরের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিচে নেমে এসে আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকেন। ক্রমেই বাড়তে থাকে জনসমাগম।

এই উত্তালতার পেছনে মূল কারণ, রাষ্ট্রপতির জারিকৃত ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’। রোববার (২৫ মে) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে কার্যকর হওয়া এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে। এই বিধানকেই ‘অবৈধ ও কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাহারের দাবিতে সোচ্চার কর্মচারীরা।

প্রসঙ্গত, ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদনের পর থেকেই সচিবালয়ে উত্তেজনা ছড়াতে শুরু করে। কর্মচারীরা ধারাবাহিকভাবে মৌন সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। সর্বশেষ রোববার সচিবালয়ের সবকটি কর্মচারী সংগঠন একজোট হয়ে বিক্ষোভ করে এবং ঘোষণা দেয়, যতদিন না অধ্যাদেশটি বাতিল হচ্ছে, ততদিন চলবে তাদের আন্দোলন।

সচিবালয়ের চলমান এই আন্দোলন নতুন করে সরকার ও প্রশাসনের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কর্মচারীদের আশঙ্কা— এই অধ্যাদেশ কার্যকর থাকলে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নয়, বরং বেড়ে যাবে অন্যায় অপসারণের শঙ্কা। কর্মচারীরা বলছেন, ‘এই আইনের মাধ্যমে আমাদের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে এক ধরনের চাকরিচ্যুতির খাঁড়া।’

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে এভাবে আন্দোলনের ঢেউ উঠলে তার প্রভাব পড়তে পারে সারাদেশের সরকারি দফতরগুলোতেও। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই চাপ সামলে আলোচনার পথে আসে, নাকি সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *