পরিবেশ উপদেষ্টার গাড়িবহরে হামলা

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর দাওধারা কাটাবন এলাকায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (Syeda Rizwana Hasan)-এর গাড়িবহরে হামলার ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সোমবার দুপুরে এই হামলার সময় অন্তত ছয়জন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন। স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তাবিত পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার এক পর্যায়ে এই হামলা ঘটে।

স্থানীয় প্রশাসন গারো পাহাড়ের সংরক্ষিত বনভূমিতে ২২৩ একর খাস জমিতে একটি পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়, যার মধ্যে ৩২ একর জমি সংরক্ষিত পাথর মহাল হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু বন বিভাগ এই প্রকল্পে আপত্তি জানালে বিরোধ তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সরেজমিন পরিদর্শনে যান এবং ঘোষণা দেন, “এই বনভূমিতে কোনো পর্যটন কেন্দ্র হবে না; বরং এখানে বন্যহাতির জন্য একটি অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হবে।”

তবে তার এই বক্তব্যেই নতুন উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে। বনভূমির পার্শ্ববর্তী কিছু স্থানীয় গোষ্ঠী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, যাদের অনেকেই পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে। দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ থেকে দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করে এবং একপর্যায়ে রিজওয়ানা হাসানের গাড়িবহর ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়।

বিক্ষোভকারী জনতার আক্রমণের শিকার হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। আহতদের মধ্যে রয়েছেন: এখন টিভির জাহিদুল খান সৌরভ, সময় টিভির ভিডিও জার্নালিস্ট বাবু চক্রবর্তী, বাংলা টিভির নাঈম ইসলাম ও বাংলাদেশের খবরের শাহরিয়ার শাকির। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং তাদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, শেরপুরের গারো পাহাড়-সংলগ্ন তিনটি উপজেলার প্রায় ২১ হাজার একর বনভূমির মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশই দখলদারদের দখলে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি পর্যটন প্রকল্পের বিরুদ্ধে পরিবেশবিদদের পাশাপাশি বন বিভাগও কড়া অবস্থান নেয়।

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের জানান, “এই বনভূমি আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটি কোনোভাবেই পর্যটনের নামে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেওয়া যাবে না।” তিনি আরও বলেন, “এখানে বন্যহাতির জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হবে, যা পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

এই হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে। শেরপুর প্রেসক্লাব (Sherpur Press Club) এবং স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠনগুলো ঘটনায় দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। তারা এটিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন আঘাত বলে মন্তব্য করে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *