হাসিনা পরিবারের ১ লক্ষ ২১ হাজার কোটি টাকার দূনীর্তির তদন্ত চলছে সাত দেশে

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগ ঘিরে দেশে-বিদেশে একযোগে তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে অন্তত সাতটি দেশে তাদের সম্পদের খোঁজ মিলেছে। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জে সন্দেহজনক সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে অন্তত পাঁচটি আন্তর্জাতিক সংস্থা।

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি (এসটিএআর), ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (আইএসিসিসি), যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি (আইসিএআর) যৌথভাবে এসব তদন্তে অংশ নিচ্ছে। তদন্তে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে অন্তত ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।

দেশে জব্দ হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। বিদেশে প্রকল্পের নামে পাচার করা হয়েছে আরও ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে পাঁচটি আলাদা দুর্নীতির মামলায় তদন্ত শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পূর্বাচলে ৬টি প্লট দখল, সূচনা ফাউন্ডেশন ও সিআরআইয়ের অর্থ লেনদেন, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে বিশাল অর্থ আত্মসাৎ, যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ কোটি ডলার পাচার এবং ৮টি প্রকল্পে মোট ১৭৭ কোটি ২০ লাখ ডলারের দুর্নীতি।

আদালতের নির্দেশে এখন পর্যন্ত ৮৮৭ কোটি টাকার স্থাবর এবং ১ হাজার ৪৫ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে পূর্বাচলের ৬০ কাঠা জমি, গুলশান-সেগুনবাগিচার ৯টি ফ্ল্যাট ও একটি বাড়ি, এবং খুলনার ২.০৪ একর জমি রয়েছে। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ১৫৬টি ব্যাংক হিসাব, যেখানে মোট স্থিতি ১ হাজার ৪৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ৫৩২ কোটি টাকা, যার মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে ৪৬৫ কোটি। বর্তমানে সেখানে ৬৭ কোটি টাকা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, ব্যাংকের সিএসআর ফান্ড থেকে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা সূচনায় সরাসরি এসেছে, এক্সিম ব্যাংক ও বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের প্রভাবের মাধ্যমে।

আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সিআরআই-এর নামে রয়েছে ৩৫ কোটি ২১ লাখ টাকার এফডিআর। প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডে রয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয় (চেয়ারম্যান), সায়মা ওয়াজেদ (ভাইস চেয়ারম্যান) এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের লেনদেনও তদন্তাধীন। এখানে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, জয় ও পুতুল সক্রিয়ভাবে যুক্ত।

বিদেশে সম্পদ শনাক্তের কার্যক্রমেও গতি এসেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) লন্ডনে শেখ রেহানার মালিকানাধীন বাড়িটি ফ্রিজ করেছে, যেটি টিউলিপ সিদ্দিকের পরিবার দীর্ঘ ১৪ বছর ব্যবহার করে আসছিল। ২০১১ সালে বাড়িটি ১২ লাখ পাউন্ডে কেনা হয়, বর্তমান বাজারমূল্যে যার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর মার্চে লন্ডন সফর করেন। সেখানে তিনি মানি লন্ডারিং বিরোধী সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশিদের পাচার করা সম্পদের তালিকা হস্তান্তর করেন। এর ভিত্তিতে যুক্তরাজ্য সরকার অনুসন্ধান শুরু করেছে। ভবিষ্যতে সিঙ্গাপুর সফরের পরিকল্পনাও রয়েছে গভর্নরের, যাতে সেখানে পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারে আলোচনা এগিয়ে নেয়া যায়।

সম্পদের প্রকৃত উৎস, প্রবাহ ও বৈধতা নিয়ে তদন্ত এখনও চলমান। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে এমএলএআর পাঠিয়ে আইনি সহায়তা চাওয়া হবে। এমনকি কিছু সম্পদ ইতিমধ্যেই অবরুদ্ধ করা হয়েছে এবং আরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রস্তুতি চলছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *