সব মামলায় খালাস, সাজামুক্ত হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একের পর এক মামলার বেড়াজালে আটকে থাকা তারেক রহমান (Tarique Rahman) অবশেষে সব সাজা থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হলেন। ২০০৭ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৮০টিরও বেশি মামলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, অর্থ পাচার, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ এবং মানহানির মতো গুরুতর অভিযোগ।

তবে বছর পেরিয়ে একে একে উচ্চ আদালতের রায়ে এসব মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি। সর্বশেষ, বুধবার ঢাকার হাইকোর্ট তার বিরুদ্ধে দায়ের করা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ মামলায় খালাসের রায় দেয়, যেখানে তাকে দুই ধারায় ৬ ও ৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল।

আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, এর মধ্য দিয়ে তারেক রহমান সব সাজা থেকে আইনি দিক দিয়ে মুক্ত হলেন। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আজাদুল ইসলাম, বিএনপি (BNP) এর সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা মো. আজমল হোসেন খোকন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সাজা আর মুক্তির জটিল ইতিহাস

২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে লন্ডনে পাড়ি জমান তারেক রহমান। এরপর থেকেই তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতেই ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত অর্থ পাচারের এক মামলায় তাকে খালাস দিলেও সহ-অভিযুক্ত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে দুদক (ACC) আপিল করলে হাইকোর্ট ২০১৬ সালে তারেককেও একই মেয়াদে সাজা দেন। তবে আপিল বিভাগ সেই রায় বাতিল করে আবারও তারেক রহমানকে খালাস দেন।

অপরদিকে, বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি আদালত তারেক রহমানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। এ মামলায় খালেদা জিয়াও সাজাপ্রাপ্ত হন। যদিও পরে আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার সাজা কমিয়ে দেন এবং সর্বশেষ পর্যায়ে এই মামলায়ও তারেক রহমান খালাস পান।

নড়াইলের মানহানি মামলাও বাতিল

২০১৪ সালে লন্ডনে একটি জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে নড়াইলে মানহানির মামলা দায়ের হয় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় আদালত ২০২১ সালে তাকে দুই বছরের সাজা দেয়। তবে বাদী নিজেই মামলা চালাতে আগ্রহী না হওয়ায় সেটি শেষ পর্যন্ত খারিজ হয়ে যায়।

স্ত্রীর মামলায়ও খালাস

২০২৩ সালের আগস্টে ঢাকার একটি আদালত তারেক রহমানকে ৯ বছর এবং তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান (Zubaida Rahman) কে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মামলায়। কিন্তু তাদের আপিলে হাইকোর্ট বুধবার রায় বাতিল করে, যার ফলে তারেক রহমান এই মামলায়ও খালাস পান।

ফলে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সব সাজা থেকে এখন মুক্ত তারেক রহমান। যদিও কিছু মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনো আপিল বিভাগে বিচারাধীন, তবে আইনি দিক দিয়ে আপাতত তার বিরুদ্ধে আর কোনো কার্যকর সাজা নেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *