রাজধানীর হাতিরঝিল থানা (Hatirjheel Police Station) এলাকার একটি অস্ত্র আইনের মামলায় কুখ্যাত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন (Subrata Bain)-এর আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মো. জাকির হোসেন। একই মামলায় সুব্রতর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, শুটার আরাফাত ও এমএএস শরীফ-এর প্রত্যেককে ছয় দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুপুরে বিপুল পুলিশি নিরাপত্তায় পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের মাথায় হেলমেট, গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। কাঠগড়ায় তোলার আগে কিছুটা হাতকড়া খুলে দিলে সুব্রত বাইন হাসতে থাকেন এবং পুলিশকে অন্য হাতের হাতকড়াও খুলে দিতে বলেন। এসময় বিচারক অনুপস্থিত থাকায় সুব্রত আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা ছবি-ভিডিও নেন। তবে সত্য কথা লিখবেন। হলুদ সাংবাদিকতা যেন না হয়। আমি যা, তাই লিখবেন।”
সুব্রত বলেন, “১৯৮৯ সাল থেকে সাংবাদিকরা লিখছে, কিন্তু ঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। সাংবাদিকদের রসালো লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে গেছে। অথচ কারও কাছে কোনো প্রমাণ নাই। আমি বাঁচার জন্য অস্ত্র রাখি। মিথ্যা বলব না। অনেক শত্রু আমার পেছনে। ৮৪, ৮৫ সাল থেকে আমি যুদ্ধ করে আসছি।”
নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, “যারা আমার নামে চাঁদাবাজি করে, তাদের ধরেন। আমার টাকা থাকলে নিজের পত্রিকা-টিভি খুলে ফেলতাম। আমাকে আয়নাঘরে রাখা হয়েছে আড়াই বছর। মাথায় রড দিয়ে মারা হয়েছে। আমার বয়স ৬১। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের বলি—সত্য তুলে ধরুন।”
সুব্রতের আইনজীবী মোহাম্মদ বাদল মিয়া রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে বলেন, “সুব্রত মিডিয়ার সৃষ্টি। ভারতে তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় ভুলতায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়। তিনি তখন এতটাই ভীত ছিলেন যে পালিয়ে যাননি।”
প্রসিকিউশন পক্ষের ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “আসামিরা মোবাইল ব্যবহার করত না, স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করত। যা জব্দ করা হয়েছে।” তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সুব্রত প্রতিবাদ করে বলেন, “সেটা চায়না ফোন। স্যাটেলাইট ফোন না। ওইটা সিটিসেল মডেলের ফোন।”
শুনানি শেষে আদালত চারজনের জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের আদেশ দেওয়ার পর সুব্রত আদালতের কাছে অনুরোধ জানান যেন তার নামাজ কাজা না হয়। আদালত পুলিশকে নামাজের ব্যবস্থা করতে বলেন।
এর আগে মঙ্গলবার ভোরে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া থেকে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের তথ্যে রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে শুটার আরাফাত ও শরীফকে আটক করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়।