অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam)-এর তৎকালীন বিশেষ সহকারী (পিএ) আতিক মোর্শেদ (Atiq Morshed)-এর বিরুদ্ধে ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নগদ (Nagad)-এর অর্থ নিয়ে দুর্নীতির এই অভিযোগ সামনে এনেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন (Rashed Khan)।
আজ শুক্রবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে রাশেদ খাঁন জানান, আতিক মোর্শেদ নগদের অভ্যন্তরে এক প্রকার ‘অদৃশ্য নিয়ন্ত্রকের’ মতো আচরণ করছেন—যদিও তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক পদে নেই। বরং, ক্ষমতার প্রভাবে নগদের ৬ তলার একটি কক্ষে নিয়মিত অফিস করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা জুঁইকে ‘ম্যানেজার, কমপ্লায়েন্স’ পদে বসিয়েছেন, পাশাপাশি আরও বেশ কিছু আত্মীয়কেও নিয়োগ দিয়েছেন নগদে।
রাশেদ খাঁন অভিযোগ করেন, নগদের ডেপুটি সিইও মুয়ীজ নাসনিম ত্বকির সঙ্গে মিলে ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাত করেন আতিক মোর্শেদ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, গত ১৮ মে রাতে মুয়ীজ ত্বকিকে রাজধানীর বেইলি রোডের বাসা থেকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। কিন্তু রহস্যজনকভাবে পরদিন বিকেলেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রাশেদ খাঁনের দাবি, আতিক মোর্শেদের হস্তক্ষেপেই ডিবি পুলিশ তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, কে আতিক মোর্শেদকে এতো ক্ষমতা দিচ্ছে? কে তাকে নগদের কার্যত দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে তার কোনো আনুষ্ঠানিক পদই নেই?
আরও বিস্ময়কর, এই পরিস্থিতির মধ্যে নাহিদ ইসলাম সম্পূর্ণ নীরব রয়েছেন। রাশেদ খাঁনের ভাষায়, “সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের দায়িত্বে থাকার সময়ই আতিক মোর্শেদের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু সেসময় কোনো তদন্ত কমিটি গঠন হয়নি বা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
তিনি সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, “এইসব কর্মকাণ্ড কি নাহিদ ইসলামের পরামর্শেই হচ্ছিল? নাকি তিনি জানতেন না কিছুই? যদি জানতেন না, তবে তিনি চুপ কেন ছিলেন তখন? আর এখনো চুপ কেন?”
রাশেদ খাঁন তার পোস্টে নাহিদ ইসলামের অতীত মন্তব্যও উল্লেখ করেন, যেখানে নাহিদ বলেছিলেন, ‘আমাদের ডোনেট করছে ধনীরা’। রাশেদের প্রশ্ন—এই ‘ধনীরা’ কারা? কারা এই অর্থ সরবরাহ করছে এবং কী উদ্দেশ্যে?
এই ঘটনায় জনমনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। একজন সাবেক উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সহকারী যখন একটি রাষ্ট্রীয় অর্থসেবা প্রতিষ্ঠানে অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতার ব্যবহার করছেন, তখন তার পেছনে থাকা নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট বলেন, “এখনই সময়, নাহিদ ইসলাম যদি নির্দোষ হয়ে থাকেন, তবে আতিক মোর্শেদকে পুলিশে সোপর্দ করুন এবং একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এই অর্থ লুটপাটের দায়ভার নির্ধারণ করুন। অন্যথায়, নাহিদ ইসলাম নিজেও এই দায় এড়াতে পারবেন না।”