বিশ্বাস হারাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার: নেতৃত্ব শূন্যতার মুখে বাংলাদেশ? আবারো কি ১/১১ এর পথে ?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুল আলোচিত বিভাজন ও অনিশ্চয়তা যেন এক নতুন মোড় নিচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ছিল উচ্চ প্রত্যাশা—দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক মহলের আস্থা ও সমর্থন ছিল তার পক্ষে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আস্থা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

সিনিয়র সাংবাদিক জিল্লুর রহমান তার সোমবারের রাজনৈতিক বিশ্লেষণে বলেন, “যতটা ব্যক্তিগত হতাশা, ততটাই এটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গভীর সংকটের প্রতিফলন।”

অন্তর্বর্তী সরকারের আস্থা সংকট

ড. ইউনূসকে সামনে রেখে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল, তার প্রতি যে ঐক্যমত ছিল, তা আজ ক্ষয়িষ্ণু। নির্বাচন ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার একসঙ্গে করার যে ভারসাম্যপূর্ণ দায়িত্ব এই সরকার নিয়েছে, তা ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। একদিকে নির্বাচন আয়োজনের সময়সূচি ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে চলছে বিতর্ক। অন্যদিকে, প্রশাসনের অকার্যকরতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ উপদেষ্টা পরিষদের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর অবিশ্বাস—সব মিলিয়ে সরকারের স্থিতিশীলতা চ্যালেঞ্জের মুখে।

সেনাবাহিনী ও প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব

সরকার বলছে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেনাপ্রধানের সরাসরি মত প্রকাশ, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং সেনা সদর দফতরের বিবৃতি—সবই ইঙ্গিত দেয় সম্পর্কের ভিতরে দ্বিধা ও দূরত্ব রয়েছে।

চীনের সঙ্গে বন্দর ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের কিছু সদস্যের আলোচনা, সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা উদ্বেগের মুখে দ্বন্দ্বকে আরো স্পষ্ট করেছে। এসব বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, সেটাই মূল প্রশ্ন।

সমাজে অস্থিরতা, শিক্ষায় বিক্ষোভ

সরকারি কর্মচারীদের অসন্তোষ, শিক্ষকদের আন্দোলন, বিদ্যুতের সংকট, ট্রাফিক ব্যবস্থার ধ্বস এবং সেনাবাহিনীর নিয়মিত অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম—সব মিলিয়ে দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে।

এমন বাস্তবতায় নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন প্রকট। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।

প্রশ্ন: সংস্কার আগে, না নির্বাচন?

ড. ইউনূস সরকার কি সত্যিই চায় একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন? নাকি সময় নিচ্ছে রাজনৈতিক হিসাব সাজাতে? জিল্লুর রহমান বলেন, “সরকার যদি সংবিধানসম্মত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকে প্রথম লক্ষ্য হিসেবে দেখে, তবে প্রতিটি পদক্ষেপে তা প্রতিফলিত হওয়া উচিত।”

নেতৃত্বের শূন্যতা ও ভবিষ্যতের শঙ্কা

সরকারের অভ্যন্তরে নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যেও ড. ইউনূস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। তবে তার বক্তব্য ও কার্যকলাপ থেকে অনেকেই প্রশ্ন করছেন—তিনি আদৌ দায়িত্ব পালনে আগ্রহী কি না।

রাজনৈতিক ভারসাম্য, সেনাবাহিনীর অবস্থান এবং প্রশাসনিক অচলাবস্থার মধ্যে বাংলাদেশ কি আবারও নেতৃত্বশূন্য অস্থিরতার দিকে ধাবিত হচ্ছে? সেই সম্ভাবনা এখন উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *