নির্বাচনের রোডম্যাপ দিলেন ড.ইউনূস, এপ্রিলের প্রথমার্ধে যেকোন দিন নির্বাচন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Professor Muhammad Yunus)। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, “ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আমরা সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি।”

প্রধান উপদেষ্টা জানান, নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রকাশ করবে। তবে মূল সিদ্ধান্ত আজই জানিয়ে তিনি বলেন, “২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে নির্বাচন হবে।”

তিনি আরও জানান, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে জিজ্ঞাসা ও আগ্রহ ছিল, তার জবাবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। “আমি আগেই বলেছিলাম নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এখন নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়ের দিকে এগোতে পারছি দেখে আমি আনন্দিত,” বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে যেসব রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। এ ধরণের নির্বাচনের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দল ফ্যাসিস্ট শাসনে পরিণত হয়েছিল। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের দায় যারা নেয়, তারা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়।”

তিনি সরকারের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যা হবে উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ এবং সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত।”

প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “যেসব প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, সেখানে সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে জনগণের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে।”

তিনি বলেন, সরকারের তিনটি মূল ম্যান্ডেট—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই ভিত্তিতেই কাজ চলছে। “রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচার বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার—যা জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায়—সেখানে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে।”

ভবিষ্যতের নির্বাচনের প্রতি আবেগী প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এমন নির্বাচন চাই, যা দেখে অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। দেড়যুগ পরে জনগণের ভোটে সত্যিকারের একটি সংসদ গঠনের সুযোগ আসছে। তরুণ ভোটারদের প্রথমবার ভোট দেয়ার সুযোগ এই নির্বাচনকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।”

ভাষণের এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীর প্রতি সরাসরি আহ্বান জানান—“আপনারা যেন প্রার্থীদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি আদায় করেন। যেমন: স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মর্যাদার প্রশ্নে কোনো আপোষ নয়; গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকার; এবং দুর্নীতি ও দলীয়করণের বিরুদ্ধে অবস্থান।”

তিনি বলেন, “আপনারা তাদের কাছ থেকে ওয়াদা নেবেন, তারা কখনোই আপনাদের মানবিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করবেন না। দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সততার প্রতিশ্রুতি দেবেন।”

ভবিষ্যতের পথচলায় এই নির্বাচন যেন একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে—এমনই প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি তাঁর ভাষণ শেষ করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *