নতুন দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ক’দিনের মাথায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার (Keir Starmer)-এর কাছে এক অদ্ভুত অনুরোধ জানালো যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। একটি স্মারকলিপির মাধ্যমে তারা আবেদন করেছে—প্রধানমন্ত্রী যেন বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেন।
স্মারকলিপিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, ইউনূস ‘দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত’ এবং তাঁর সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের ব্রিটিশ নেতাদের যোগাযোগ বাংলাদেশের ‘আইনি ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে’।
এই ঘটনায় যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ একে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী ও হাস্যকর দাবি বলেও মন্তব্য করেছেন।
প্রফেসর ইউনূস বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবাধিকার ও সামাজিক ব্যবসার দূত হিসেবে কাজ করছেন এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তিনি সম্প্রতি জার্মানির চ্যান্সেলর ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।
স্মারকলিপির বিতর্কের মধ্যেই একটি নতুন গুঞ্জন ছড়িয়েছে—জানা যাচ্ছে, প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে যুক্ত ব্রিটিশ মানবাধিকার কর্মী ও সংসদ সদস্যদের একটি গ্রুপ ‘হাউস অব কমন্স’-এ একটি প্রস্তাব উত্থাপনের কথা ভাবছেন, যেখানে যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হতে পারে। যদিও এই প্রস্তাব এখনো আনুষ্ঠানিক নয়, তবে বিষয়টি ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে বিদেশে টেনে নেওয়া এবং প্রবাসী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। পাশাপাশি এই ধরণের দাবি ব্রিটেনের মত উদার গণতন্ত্রের দেশে কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে এই স্মারকলিপি নিয়ে হাস্যরসের ঝড় উঠেছে। অনেকেই লিখেছেন—“নোবেলজয়ীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না করার অনুরোধ? এটা কি আন্তর্জাতিক কূটনীতির নতুন সংজ্ঞা?” অন্য একজন লিখেছেন—“যারা বহির্বিশ্বে রাজনীতির নামে লজ্জা বাড়ায়, তারা দেশের কোন উপকার করছে?”
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি এখন আর শুধু স্মারকলিপির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই—এটি হয়ে উঠেছে একটি আন্তর্জাতিক ইমেজের লড়াই, যেখানে প্রতিপক্ষদের জবাব দেওয়ার কৌশলকেই বড় করে দেখা হচ্ছে।