চাঁদের পথে প্রথম বাংলাদেশি নারী: ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন ইয়াসমিন

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী যাচ্ছেন চাঁদের অভিযানে। তিনি ঢাকার তরুণ বিজ্ঞানী রুথবা ইয়াসমিন (Ruthba Yasmin)—স্বপ্নের সাহসে ভর করে পৌঁছাতে চলেছেন চাঁদের মাটি পর্যন্ত, যেখানে আগে কোনো বাংলাদেশির পদচিহ্ন নেই। এই অভিযাত্রা শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশের জন্যও এক গর্বিত ইতিহাসের সূচনা।

২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা Space Nation ঘোষণা করে তাদের “Moon Pioneer” মিশনের। এই মিশনে অংশ নিচ্ছেন একঝাঁক নারী ক্রু, তাদের সঙ্গে মাত্র একজন পুরুষ সদস্য। সেই বিশেষ দলে জায়গা করে নেন রুথবা ইয়াসমিন, যিনি হবেন চাঁদের পৃষ্ঠে পা রাখা প্রথম বাংলাদেশি।

মিশন ঘোষণার দুই দিন আগে, ১৪ এপ্রিল, আরেকটি নজরকাড়া ঘটনা ঘটে। পপ তারকা কেটি পেরি নেতৃত্ব দেন এক নারীনিয়ন্ত্রিত মহাকাশ অভিযানে, ব্লু অরিজিনের মাধ্যমে। এই ধারাবাহিকতা ইঙ্গিত দেয়, মহাকাশ এখন নারীদের জন্য কেবল প্রবেশযোগ্য নয়—তারা এখন সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

রুথবার এই স্বপ্ন শুরু হয়েছিল ছোটবেলায়, ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুলে পড়াশোনার সময়েই। সেখান থেকে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে, ২০১৪ সালে Mount Holyoke College থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন, পরে গণিতেও ডিগ্রি নেন। কোভিড-১৯ মহামারিতে স্বপ্নে ভাটা পড়ে—২০২১ সালে ফিরে আসেন দেশে। কিন্তু থেমে যাননি। United International University থেকে ডেটা সায়েন্সে মাস্টার্স করে ফের এগিয়ে যান মহাকাশের পথে।

২০২৪ সালে ফের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে University of South Alabama থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন রুথবা। এখানেই তার গবেষণা থিসিস তাকে একধাপ এগিয়ে দেয় মহাকাশ প্রশিক্ষণের সুযোগে। বিষয় ছিল ‘স্পেস ওয়েদার’, বিশেষ করে পৃথিবীর ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে প্রভাব ফেলা জিওম্যাগনেটিক ঝড়। এই গবেষণাই হয়ে ওঠে তার অভিযাত্রার টার্নিং পয়েন্ট।

রুথবা বলেন, ‘আমার ভিতরে এক গভীর আকাঙ্ক্ষা ছিল আমার ফিজিক্স ডিগ্রিকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগানোর। সেখান থেকেই শুরু হয় মহাকাশে পা রাখার স্বপ্ন।’

Space Nation-এর প্রশিক্ষণে রুথবা সফলভাবে পার করেন দুটি ধাপ। প্রথম ধাপে তিনি ছিলেন Moon Base EVA Specialist—যেখানে মক স্পেসস্যুট পরে চাঁদের পৃষ্ঠে অভিযানে অংশ নেন। পরের ধাপে, Mission Control Engineer হিসেবে চাঁদে থাকা দলকে নির্দেশনা দিয়ে নিরাপদে ফেরত আনার দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে।

দুটি ক্ষেত্রেই তার পারদর্শিতা প্রশংসা কুড়ায়। তার মহাকাশ অনুপ্রেরণা হলেন NASA অ্যাস্ট্রোনট Sunita Williams, যিনি দীর্ঘতম সময় মহাকাশে কাটানো নারী হিসেবে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। রুথবা বলেন, “মহাকাশ শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো সীমিত। মাত্র ২০ শতাংশ নারী কাজ করেন এই শিল্পে, অ্যাস্ট্রোনটদের মধ্যে সংখ্যাটা মাত্র ১১ শতাংশ। এটা বদলাতে হবে।”

এই স্বপ্নযাত্রা কেবল একজন নারীর মহাকাশে পা রাখার কাহিনি নয়, বরং এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রতিচ্ছবি। যেখানে সাহস, বিজ্ঞান এবং নারীর অগ্রযাত্রা মিলে নতুন ইতিহাস রচনা করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *