দেশে আপাত শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আবহে গণতন্ত্র ও সরকারের প্রতি নাগরিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন নাজমুল আহসান (Nazmul Ahsan), ব্লুমবার্গের সাংবাদিক। এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি লেখেন—একটি গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ‘অ্যান্টি-এস্ট্যাবলিশমেন্ট’ মনোভাব আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ব্যাহত করছে। এ অবস্থার পরিবর্তনে প্রয়োজন সরকারের প্রতি ন্যূনতম আস্থা ও দায়িত্বশীল সমালোচনা।
“দেশ এখন একটু শান্ত আছে, তাই ভয় ভয়ে একটা কথা বলি,”—এই বাক্য দিয়ে শুরু করা পোস্টে তিনি বলেন, “নির্বাচিত সরকারের একটা ম্যান্ডেট থাকে। অথচ আমাদের সিভিল সোসাইটি ও ‘ফ্রিঞ্জ বাট লাউড’ গ্রুপগুলো ঐতিহাসিকভাবে সেই ম্যান্ডেটকে ইগনোর করেছে বা ডাউনপ্লে করেছে। এটা কাজের কিছু না। It didn’t work.”
তিনি মনে করেন, একটি মধ্যম আয়ের দেশের জন্য সরকার ও জনগণের মধ্যে বিশ্বাস, সামাজিক চুক্তি (social contract) এবং পারস্পরিক ডেফারেন্স থাকা অপরিহার্য। তার ভাষায়, “সরকারের ম্যান্ডেট আর লেজিটিমেসি নিয়ে অকারণে প্রশ্ন উঠলে দেশ ভয়ংকর দিকে যাবে।”
সাংবাদিক নাজমুল আহসান কড়া সমালোচনার পরিবর্তে সরকারের সঙ্গে ‘এঙ্গেজমেন্ট’-এর পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি বলেন, “কথায় কথায় ধ্বংসাত্মক বিক্ষোভ, তীব্র রেটরিক—ইজ নট হেল্পফুল। পলিসি গ্রহণে সরকারের অধিকারকে স্বীকার করতে হবে, এমনকি আমরা সেই পলিসির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেও।”
তিনি সতর্ক করেন, সরকারকে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করা একটি ক্ষতিকর প্রবণতা। “বাংলাদেশে সরকার দুর্বল, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল। এই দুর্বলতা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের প্যাট্রোনেজ নেটওয়ার্ক দিয়ে পূরণ করে। যদি এই কাঠামো বদলাতে চাই, তবে আমাদের সরকারি সিস্টেমের সঙ্গেই কাজ করতে হবে,”—বলেছেন তিনি।
গণতন্ত্রচর্চার প্রসঙ্গে নাজমুল আহসান বলেন, “গণতন্ত্রায়নের দাবি জারি থাকবে। সামরিক ও আমলাতান্ত্রিক ‘ডিপ স্টেট’-এর বিপরীতে বেসামরিক ও রাজনৈতিক শক্তির পক্ষ নিতে হবে। কিন্তু কনফ্রনটেশনের বদলে এঙ্গেজমেন্টের কৌশল নিতে হবে।”
সবশেষে তিনি উল্লেখ করেন, “একটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোটে নির্বাচিত সরকারের এটা প্রাপ্য। নয়তো আবার সেই অচল অবস্থায় ফিরে যেতে সময় লাগবে না।”
এই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। কেউ এটিকে বাস্তববাদী ও প্রয়োজনীয় আত্মসমালোচনা হিসেবে দেখছেন, কেউবা সরকারের প্রতি অতিরিক্ত ‘ডেফারেন্স’ প্রদর্শনের সমালোচনা করছেন।