জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা আসছে: ড. ইউনূস

আসন্ন জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে ঐতিহাসিক ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অস্ট্রেলিয়ার (Australia) নবনিযুক্ত হাইকমিশনার সুসান রাইল (Susan Ryle)-এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ কথা বলেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি একটি সুষ্ঠু উত্তরণের লক্ষ্যে। সংবিধান, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনিক সংস্কারে আমাদের অগ্রাধিকার। আগামী মাসে ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে “জুলাই সনদ” ঘোষণা করা হবে, যা আমাদের উত্তরণের রূপরেখা তুলে ধরবে।’

সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কার্যক্রম পুনরায় চালু করায় কৃতজ্ঞতা জানান। জবাবে হাইকমিশনার রাইল জানান, এখন থেকে বাংলাদেশিরা অনলাইনে ভিসার আবেদন করতে পারবেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় ৬৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী এবং ১৪ হাজার শিক্ষার্থী বসবাস ও অধ্যয়ন করছেন বলে তিনি জানান।

আলোচনায় উঠে আসে নির্বাচন, চলমান সংস্কার, বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা (Rohingya) সংকটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ড. ইউনূস বলেন, ‘অস্থিরতার পর আমরা এখন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আসন্ন নির্বাচন হবে অবাধ, উৎসবমুখর এবং তরুণ ভোটারদের অংশগ্রহণে রঙিন।

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনী সহায়তা প্রসঙ্গে সুসান রাইল জানান, ইউএনডিপির মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তা দেওয়া হবে।

বাণিজ্য সম্পর্কেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। রাইল বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে, যা গত পাঁচ বছরে গড়ে ১৬.২ শতাংশ হারে বেড়েছে।’ অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস প্রোগ্রামের মাধ্যমে গঠিত ৩,০০০ প্রাক্তন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর নেটওয়ার্ককেও দেশের অগ্রগতিতে মূল্যবান বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এই প্রসঙ্গে ড. ইউনূস অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়াতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইউনূস বলেন, ‘এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। অস্ট্রেলিয়ার সহানুভূতিশীল অংশগ্রহণ আশা করি।’ রাইল জানান, ২০১৭ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের জন্য মোট ৫৫৩.৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তা দিয়েছে। সম্প্রতি আরও ৯.৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারে অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, নিরাপদ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

সাক্ষাতে আরও উপস্থিত ছিলেন এসডিজি-বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক উইংয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *