লন্ডনে তারেক-ড. ইউনূস বৈঠকে ‘অসন্তুষ্ট’ একটি পক্ষ

লন্ডনে তারেক রহমান (Tarique Rahman) ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)–এর বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) সরাসরি অভিযোগ করেছেন, এই বৈঠক একটি পক্ষের ‘পছন্দ হয়নি’ বলেই তারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নেয়নি।

বুধবার রাজধানীর তুরাগের রানাভোলায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য ফরম নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন। ফখরুল বলেন, “সংঘর্ষের পথ ছেড়ে দুই নেতা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলেছেন। রাষ্ট্রনায়কের মতো নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু অনেকের এই শান্তির বার্তা ভালো লাগেনি, কারণ তারা জানে—নির্বাচন হলে তারা বিপদে পড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “এখন নির্বাচন না থাকায় তারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু নির্বাচন হলেই জনগণের ভালোবাসার দল ক্ষমতায় আসবে—এটা জানে বলেই তারা ঐকমত্য বৈঠকে আসেনি।”

“আমরা চাই নতুন বাংলাদেশ, না চাই পুরনো দুঃশাসন”

বিএনপির নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগের মতো আচরণ করা যাবে না। চাঁদাবাজি করে কেউ নেতা হতে পারবে না। আমরা একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ চাই। আগের মতো দুঃশাসন নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সদস্য নবায়নের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনো আওয়ামী লীগ কর্মী এই তালিকায় না আসে। আওয়ামী লীগ কখনোই নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্যের কিছু দেখে না। তবে যদি কেউ নিরপেক্ষ হন, তাকে দলে আহ্বান জানানো যেতে পারে।”

“তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নিরপেক্ষ ভোট সম্ভব নয়”

আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না বলেই মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, “ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই ভোট পড়ে যায়। তাই আমরা চেয়েছি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যাতে জনগণ নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে ফখরুল বলেন, “মানুষকে ভয় দেখিয়ে নয়, বরং বিনয়ের সঙ্গে ভোট চাইতে হবে।”

“১৫ বছরে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে”

ফখরুল বলেন, “গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। একবার কারাগারে এক বৃদ্ধ বিএনপি কর্মীকে কয়েদির পোশাকে ঝাড়ু দিতে দেখেছি। সে দৃশ্য হৃদয় ভেঙে দেয়।”

একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, “উত্তরায় আমার বাসার ডিশ লাইন দিতেন তুষার নামের একজন ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তার ব্যবসা কেড়ে নিয়েছে। এমন হলে আমরা আর আওয়ামী লীগের চেয়ে আলাদা থাকব না। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলছি।”

“এক কোটি চাকরি, চাঁদাবাজদের দলছাড়া রাখার অঙ্গীকার”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ফখরুল বলেন, “আমাদের দল ক্ষমতায় এলে বেকার সমস্যা সমাধান হবে। এক কোটি চাকরি সৃষ্টি করা হবে। তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার গঠন করা হবে। যারা চাঁদাবাজি করছে তারা পেশাদার অপরাধী। বিএনপিতে তাদের কোনো জায়গা নেই।”

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “১৯৯১ সালে বিএনপির সিট সংখ্যা নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু দলের ভাবমূর্তি ভালো ছিল বলেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছিল।”

“আ.লীগের কেউ সদস্য ফরম পাবে না”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক মো. আমিনুল হক। তিনি বলেন, “যারা দুঃসময়ে দলের পাশে ছিলেন, তারাই সদস্য ফরম পাবেন। কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সদস্য ফরম পাবেন না। যদি কেউ দেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মো. মোস্তফা জামান, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এম কফিল উদ্দিন, আফাজ উদ্দিন, এবিএম আব্দুর রাজ্জাক, মোস্তফা সরকার, আলমগীর হোসেন শিশির, জহিরুল ইসলাম, আলমাছ আলী, চান মিয়া বেপারী প্রমুখ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *