আইনি ক্ষমতার অবমূল্যায়ন নয়, বিএনপির প্রস্তাবনায় ক্ষমতার ভারসাম্যের দৃষ্টান্ত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে প্রায়ই শোনা যায়—প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কেবল রাজনৈতিক প্রভাব থেকেই আসে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনকালের অভিজ্ঞতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, এই দেশের ক্ষমতার মূল উৎস হচ্ছে আইন, দাপ্তরিক কাঠামো এবং সাংবিধানিক সুরক্ষা

রাজনীতিকদের কারিশমা বা জনপ্রিয়তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় লিখিত ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা। প্রধানমন্ত্রী যদি কেবল রাজনৈতিক প্রভাবেই রাষ্ট্র চালাতে পারতেন, তাহলে তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজের কাছেই রাখতে হতো না, কিংবা রাষ্ট্রপতির মতো “প্রোটোকলের পদেও” তার সর্বোচ্চ আনুগত একজন লয়ালিস্টকে বসানোর প্রয়োজন পড়তো না। এগুলো নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, এগুলো হলো ক্ষমতা কাঠামোর নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল।

এই পটভূমিতে বিএনপির সাম্প্রতিক প্রস্তাবনাগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দলটি বলছে, প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ১০ বছরের সীমা তারা মানতে রাজি। এটি নিছক প্রতীকী নয়, বরং তাৎপর্যপূর্ণ আত্মনিয়ন্ত্রণের বার্তা। ১০ বছরের সীমা অতিক্রম করলে তারেক রহমান নিজে ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হবেন না এমন অবস্থান থেকেই এই সীমার পক্ষে মত দিয়েছেন। এমনকি তার পরিবারের অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রী হলেও, আইনি কাঠামোর বাইরে গিয়ে ক্ষমতা চর্চার সুযোগ থাকবে না—এমন পরিস্থিতি তৈরি করার অঙ্গীকারও রয়েছে।

এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিরল এক উদাহরণ। এমন একটি দল, যারা একসময় নিজ দলের নেতার বাড়ি রক্ষার জন্য রাস্তায় আন্দোলন করেছে, আজ তারাই ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান ছাড়ার অঙ্গীকার করছে।

এর পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি:

  • উচ্চকক্ষে (সেনেট জাতীয় ধরণের ব্যবস্থা) আনুপাতিক হারে সদস্য নির্ধারণ।
  • সংবিধান সংশোধনের জন্য উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনের বাধ্যবাধকতা।
  • গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে বিরোধী দল বা উচ্চকক্ষের ভূমিকা নিশ্চিত করা।
  • সংসদীয় কমিটিগুলোর নজরদারি ও বাধ্যতামূলক তলবের ক্ষমতা দেওয়া।

এগুলো নিছক কারিগরি বিষয় নয়। বরং এগুলোর মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ রোধ করে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা আনা সম্ভব।

এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই ইনক্রিমেন্টাল (ধাপে ধাপে) অগ্রগতিকে হালকাভাবে না দেখা। যে সব বিষয়ে ঐক্যমত্য হচ্ছে তার আলোকে যত দ্রুত সম্ভব চার্টারটি প্রণয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া। মনে রাখতে হবে সবার সব চাওয়া পূরণ কখনও সম্ভব না। তাই এই ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়াকেই স্বাগত জানানোটাই হবে বিবেচকের কাজ।

আজ বিএনপি যেমন তার দলীয় হিসাব-নিকাশের বাইরে গিয়ে বৃহত্তর গণতন্ত্রের স্বার্থে এসব প্রস্তাবনা বিবেচনা করছে ঠিক একই ভাবে সাময়িক লাভের আশায় শুধু বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা না করে ইতিমধ্যেই ঐক্য মত্ত প্রতিষ্ঠা হয় দাপ্তরিক ও আইনি কাঠামোকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া কারন এই সংস্কারেই ভবিষ্যতের স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধ সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *