জাপায় বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ ধাক্কা: মহাসচিব সহ তিন জ্যেষ্ঠ নেতাকে অব্যাহতি

জাতীয় পার্টির (জাপা) অভ্যন্তরে ফের বড়সড় ধাক্কা। মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু (Md. Mujibul Haque Chunnu)–কে পদ থেকে সরানোর এক ঘণ্টার মাথায় তাকে ও আরও দুই জ্যেষ্ঠ নেতা—আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (Anisul Islam Mahmud) ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার (ABM Ruhul Amin Howlader)—কে দলীয় সব পদ-পদবী থেকে অব্যাহতি দিলেন চেয়ারম্যান জি এম কাদের (GM Quader)।

সোমবার (৭ জুলাই) জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জুনের মতবিনিময় সভায় জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা এই তিন সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনেন এবং কঠোর শাস্তির দাবি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ জুন অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়াম সভায় তিনজনকে সব পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসারে চেয়ারম্যানের ক্ষমতাবলে সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন জি এম কাদের। তিনি এককভাবে সিনিয়র কো চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে সব পদ থেকে অব্যাহতি দেন। দলীয় বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই সিদ্ধান্ত সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়েছে।

তবে এর প্রতিক্রিয়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দলীয় রাজনীতি। অব্যাহতির ঠিক আগমুহূর্তে এক যৌথ বিবৃতিতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, মহাসচিব হিসেবে শামীম হায়দার পাটোয়ারিকে নিয়োগ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। তারা অভিযোগ করেন, “এটি এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ, যা পার্টির অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলেছে।”

দু’নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, “বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হকই বৈধ ও সম্মানিত মহাসচিব। কাউন্সিল ঘোষিত হওয়ার পর, চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো নিয়োগ বা অব্যাহতি গ্রহণযোগ্য নয়। শামীম হায়দারকে মহাসচিব ঘোষণা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। এটি নীতিহীন ও অসম্মানজনক একটি পদক্ষেপ।”

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, “গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলের আগে কোনো অব্যাহতি বা বহিষ্কার সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা বিস্মিত, কীভাবে নিয়মিত চাঁদা দেওয়া প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মিথ্যা অভিযোগে সরিয়ে দেওয়া হলো। দল এখন একনায়কতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের যাঁতাকলে।”

বিবৃতির শেষ অংশে তারা স্পষ্ট বার্তা দেন: জাতীয় পার্টিকে ব্যক্তি নয়, গঠনতন্ত্র ও আদর্শ দিয়ে পরিচালিত হতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ও সম্মিলিত নেতৃত্বই পার্টির ঐতিহ্য। সেই জায়গায় ফিরে যাওয়ার জন্য ত্যাগী ও আদর্শবান নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান দুই জ্যেষ্ঠ নেতা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *