খুলনার ফুলতলা উপজেলার স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত ছাত্র-যুব সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার (Mia Golam Porwar) দাবি করেছেন, জামায়াতের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে এবং দলটি এখন ক্ষমতার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। তবে তার এই বক্তব্যে প্রশ্ন উঠছে—এটি বাস্তব রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের প্রতিফলন নাকি কেবল সমর্থকদের উজ্জীবিত করার কৌশল?
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার বলেন, “জামায়াত ক্ষমতায় গেলে কোনো এমপি বা মন্ত্রী সরকারি গাড়ি, বাড়ি কিংবা বিশেষ সুবিধা নেবে না।” এমন অঙ্গীকার শুনতে ভালো শোনালেও বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি বহুবারই দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা রক্ষা হয়নি। ফলে এই প্রতিশ্রুতি কতটা বিশ্বাসযোগ্য—সেটি নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি অভিযোগ তোলেন যে একটি শক্তি মৌলিক সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাঁধা সৃষ্টি করছে, চাঁদাবাজি করছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াতের অতীত ভূমিকা, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এখনও প্রবল বিতর্ক বিদ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে “ক্ষমতার কাছাকাছি” দাবিটি অনেকের কাছেই অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার যদি কোনো দলের পকেটে যায় জনগণ তা মেনে নেবে না। একই সঙ্গে পিআর পদ্ধতি, জুলাই সনদ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত বলে জানান। কিন্তু প্রশ্ন হলো—বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে জামায়াত আদৌ কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে?
তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিও দেন গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ক্ষমতায় গেলে প্রত্যেক তরুণকে কর্মসংস্থানের আওতায় আনা হবে, চাকরি দিতে না পারলে দেওয়া হবে বেকার ভাতা। তবে বর্তমান বাস্তবতায় যেখানে দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোও এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে হোঁচট খেয়েছে, সেখানে জামায়াতের এই ঘোষণা বাস্তবসম্মত বলে মনে করা কঠিন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ফুলতলা উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুল আলিম মোল্ল্যা। বক্তব্য রাখেন অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম সাদ্দাম প্রমুখ। এর আগে সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলাতেও অনুরূপ ছাত্র-যুব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সব মিলিয়ে বলা যায়, জামায়াতের এই ক্ষমতাসংলগ্ন দাবি রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। বক্তৃতায় দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা এখনো অনিশ্চিত—আর জনপ্রিয়তার বৃদ্ধির দাবিও এখনও রাজনৈতিকভাবে যাচাইযোগ্য নয়।