ভারতের উত্তরপ্রদেশের ঐতিহাসিক অযোধ্যায় রাম মন্দির (Ayodhya) উদ্বোধনের উৎসব যখন ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি সারা বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, তখনই ইতিহাসের পাতায় অমলিন থেকে যাওয়া প্রায় পাঁচ শতাব্দীর স্মৃতি—বাবরি মসজিদ (Babri Masjid)—নতুনভাবে আলোচনায় আসে। ভারত থেকে সেই নিদর্শন চিরতরে বিলীন হলেও দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সমাজের হৃদয়ে তার অস্তিত্ব আজও জীবন্ত।
এই আবেগ, স্মৃতি ও ঐতিহাসিক চেতনা থেকেই বাংলাদেশে নতুন এক উদ্যোগ বাস্তব রূপ পাচ্ছে। কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া (Keraniganj), ধলেশ্বরী নদীর (Dhaleshwari River) তীরে বাবরি মসজিদের আদলে নির্মিত হচ্ছে এক বিশাল মসজিদ। জামিয়াতুত তারবিয়া আল ইসলামিয়ার পাশে গড়ে ওঠা এ স্থাপনা ইতিমধ্যে এলাকাজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নির্মাণশৈলীতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে মোগল স্থাপত্যের গাম্ভীর্য—উঁচু গম্বুজ, খোদাই করা খিলান, দেয়ালের অলংকার—সব মিলিয়ে যেন পুনর্জীবিত হচ্ছে ভারতের সেই মীর বাকি নির্মিত বাবরি মসজিদের স্মৃতি।
এই উদ্যোগের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (Shah Ahmad Shafi) রহমাতুল্লাহি আলাইহি। ছয় বিঘা (কিছু তথ্য অনুযায়ী তিন বিঘা) জমিতে নির্মিত এই বিশাল মসজিদের অর্থায়ন পুরোপুরি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে—কেউ দিচ্ছেন এক বস্তা সিমেন্ট, কেউ জমিয়ে রাখা সঞ্চয়। কোনো বড় দাতা বা বিদেশি সহায়তা ছাড়া, শুধুই মানুষের ঈমান, আবেগ ও নবীপ্রেমের টানে এগিয়ে যাচ্ছে নির্মাণকাজ।
দায়িত্বশীলদের ভাষায়, “অযোধ্যায় যা হারিয়েছে, ধলেশ্বরীর তীরে তা নতুন রূপে ফিরে আসছে।” তাদের বিশ্বাস—এ মসজিদ শুধু স্থাপনা নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, পরিচয় ও ইতিহাস সংরক্ষণের প্রতীক হয়ে উঠবে।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির এবং বাংলাদেশের বাবরি মসজিদ নির্মাণ ধারণার উদ্যোক্তা, আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর সন্তান মাওলানা মামুনুল হক (Maulana Mamunul Haque) এই স্বপ্নের প্রকল্পকে সামনে থেকে পরিচালনা করছেন। তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত হানতেই। কিন্তু আল্লাহর কুদরতে সেই আঘাত আজ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। একটি বাবরি মসজিদ শহীদ হয়েছে, কিন্তু পৃথিবীর নানা প্রান্তে তার চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে হাজারো বাবরি মসজিদের ধারণা জেগে উঠেছে। ধলেশ্বরীর তীরে এই মসজিদই প্রমাণ করবে—ইসলামের ইতিহাস কখনো মুছে যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “এই মসজিদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেবে যে মুসলমানরা ইতিহাস ভুলে যায় না, বরং তা ধারণ করে সামনে এগিয়ে যায়। ইট-পাথর ক্ষয়ে যেতে পারে, কিন্তু ইতিহাসের স্মৃতি বিলীন হয় না।”
অযোধ্যায় যখন স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, ঠিক তখনই যেন ইতিহাস নতুনভাবে লেখা শুরু হয়। আজ সেই ইতিহাসই বাংলাদেশের বুকে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে—ধলেশ্বরীর তীরে গড়ে ওঠা এই মসজিদ মুসলিম উম্মাহর মানসিক দৃঢ়তা, ঐতিহ্য ও চেতনার নতুন প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে।
-মুফতি আবদুল্লাহ তামিম
বার্তাবাজার/এমএইচ


