মডেল মেঘনা আলম (Meghna Alam)–কে ঘিরে বিতর্কিত আটক প্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়ার মুখে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক (Rezaul Karim Mallick)–কে। তাকে ডিবি থেকে সরিয়ে ডিএমপি সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে, তবে নতুন করে কোনো পদায়ন দেওয়া হয়নি।
গত শনিবার ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। যদিও আদেশে সরানোর কারণ স্পষ্ট করে বলা হয়নি, কিন্তু সূত্র জানায়, এটি ছিল সরকারের উচ্চপর্যায়ের চাপের ফল।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে মডেল মেঘনা আলমকে ডিবি সদস্যরা সিনেমার মতো কায়দায় বাসার দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে যায়। মেঘনা সেই সময় ফেসবুক লাইভে এসে ঘটনার সম্প্রচার করেন, যা রাতারাতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। শুরুতে ডিবি এই আটকের বিষয়টি অস্বীকার করলেও, পরদিন রাতে তাকে সিএমএম আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’-এর বিতর্কিত প্রিভেনটিভ ডিটেনশন ধারায় ৩০ দিনের জন্য তার আটকাদেশ জারি করে। এই ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (Amnesty International) এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক মহলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
মেঘনা আলমকে আটকের পর তার এক সহযোগী দেওয়ান সামিরকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ঠিক এই সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন প্রভাবশালী বিশেষ সহকারী ফোনে ডিবিপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিকের কাছে সামিরের বিষয়ে জানতে চান। রেজাউলের জবাবে অসন্তুষ্ট হন ওই বিশেষ সহকারী এবং বিষয়টি দ্রুত আইজিপি (IGP) ও ডিএমপি কমিশনারকে অবহিত করেন। ওই রাতেই সিদ্ধান্ত হয় রেজাউলকে পদ থেকে সরানোর।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, রেজাউলকে সরিয়ে দেওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত তার কোনো বিকল্প নিযুক্ত করা হয়নি। সাধারণত এমন পদে বদলির সময় তাৎক্ষণিকভাবে স্থলাভিষিক্ত করা হয়, কিন্তু এবার ডিবিপ্রধানের পদটি খালি রাখা হয়েছে, যা গোয়েন্দা বিভাগে অনিশ্চয়তা ও গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক ১৭তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ১৯৯৮ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। রাজনৈতিক পালাবদলের জের ধরে একাধিকবার তার ক্যারিয়ারে ব্যাঘাত ঘটে। ২০০১ সালে বিএনপি আমলে চাকরিতে ফিরে এলেও, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এলে তাকে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। অবশেষে ২০২3 সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাকে ডিআইজি পদে উন্নীত করে সিআইডিতে পদায়ন করা হয়। এরপরই তাকে ডিবিপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, মেঘনা আলমকে আটক করতে গিয়ে রেজাউল করিম মল্লিক প্রশাসনিক নির্দেশ মেনে কাজ করেছেন, না কি তার ভূমিকায় রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব ছিল? যেভাবেই হোক, বিতর্কিত এই ঘটনাই তার ডিবিপ্রধান হিসেবে মেয়াদের অকাল ইতি টেনে দিয়েছে।