সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের পরেও নারায়ণগঞ্জে ‘মার্চ ফর ইউনূস’ নামে ঘোষিত কর্মসূচিতে বাস্তব চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফেসবুকে লাখো রিয়্যাকশন, শেয়ার আর আবেগঘন পোস্টের ঝড় তুললেও সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৫ জন।
‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’ স্লোগান সামনে রেখে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আয়োজকরা চেয়েছিলেন এটি হবে একটি ‘গণজোয়ারের সূচনা’। কিন্তু বাস্তবে তা রূপ নিল নিরব, ক্ষীণ এক জমায়েতে। উপস্থিত কয়েকজনের মাঝে বক্তব্য দেন মূল উদ্যোক্তা আলিফ দেওয়ান। তার ভাষায়, “আমরা কেউই নির্বাচনের বিপক্ষে নই, আমরা চাই সংস্কারযুক্ত নির্বাচন হোক।” কিন্তু এই বক্তব্য প্রশ্ন তোলে, যদি নির্বাচনের বিপক্ষে না-ই হন, তবে নির্বাচনের আগে সংস্কার চেয়ে তার পথ কেন রুদ্ধ করতে চান?
ফেসবুক হাইপ নাকি বট-চালিত মিথ
রবিবার (১৩ এপ্রিল) থেকেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে ‘মার্চ ফর ড. ইউনূস’ এর ব্যানার, পোস্ট ও নানা আবেগতাড়িত স্লোগান। জাতীয় ও স্থানীয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমও গুরুত্ব দিয়ে তা প্রকাশ করে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এসব ‘হাইপ’ অনেকাংশেই ছিল কৃত্রিম—বট অ্যাকাউন্ট, ফেক প্রোফাইল ও ম্যানিপুলেটেড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে একধরনের বিভ্রান্তিকর জনপ্রিয়তা তৈরি করা হয়।
সাইবার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ফেসবুক প্রচারণা আজকাল খুবই সহজ; কিছু স্পনসর্ড কনটেন্ট, কিছু ভুয়া অ্যাকাউন্ট আর আবেগঘন বার্তা ব্যবহার করলেই তৈরি হয় একটি ‘আঁধারে জোয়ার’। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা বলে অন্য কথা।
জনগণ চায় নির্বাচন, বায়বীয় সংস্কার নয়
বাংলাদেশে গত ১৭ বছর ধরে কার্যকর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়নি বলে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। নির্বাচন মানে কেবল ভোট নয়—এটি হচ্ছে জনমতের প্রতিফলন। অথচ ‘সংস্কার’ নামের আড়ালে এক ধরনের অদৃশ্য সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা জনগণের চাওয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
‘মার্চ ফর ইউনূস’-এর মতো কর্মসূচি এই মুহূর্তে বাস্তবতা থেকে ছিটকে থাকা একটি অলীক ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। অথচ মানুষ এখন ভোট দিতে চায়, সিদ্ধান্ত নিতে চায়। সোশ্যাল মিডিয়ার সাজানো হাইপ দিয়ে সেই বাস্তবতা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা সফল হয়নি বলেই নারায়ণগঞ্জে এই কর্মসূচি হয়েছে জনশূন্য।
শেষ কথা
একটি দেশের রাজনীতি গঠিত হয় মাটি ও মানুষের সংযোগে, সোশ্যাল মিডিয়ার কৃত্রিম ব্যান্ডউইথে নয়। যারা আজ ‘সংস্কার’-এর নামে নির্বাচন ঠেকাতে চায়, তারা গণতন্ত্র নয়, দীর্ঘমেয়াদী অনির্বাচিত শাসনব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। এবং বাংলাদেশের মানুষ এই ফাঁদে আর পা দেবে না—এই বাস্তবতা নারায়ণগঞ্জই দেখিয়ে দিল।