প্রবাসেই মারা গেলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত  কবি, লেখক ও কলামিস্ট দাউদ হায়দার (Daud Haider) আর নেই। রবিবার (২৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টার দিকে জার্মানির বার্লিনের একটি বৃদ্ধাশ্রমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এ খবর নিশ্চিত করেছেন লন্ডনপ্রবাসী নাট্যশিল্পী ও সংগঠক স্বাধীন খছরু (Swadhin Khachru)।

১৯৭৩ সালে তার রচিত ‘কালো সূর্য্যের কালো জ্যোত্স্নায় কালো বন্যায়’ শিরোনামের একটি কবিতার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল দাউদ হায়দারকে। ১৯৭৪ সালের ২০ মে সন্ধ্যায় কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে পরদিন কলকাতাগামী একটি বিশেষ ফ্লাইটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিশেষ ওই ফ্লাইটে তিনি ছাড়া আর কোনো যাত্রী ছিল না। ভারতে পৌঁছানোর পর ভারত সরকারও তাকে দেশে থাকার অনুমতি প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৮৭ সালে জার্মানির গুন্টার গ্রাস (Günter Grass)-এর বিশেষ প্রচেষ্টায় বার্লিনে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন দাউদ হায়দার।

জীবনের শেষ অধ্যায়ে বার্ধক্যজনিত নানান জটিলতায় ভুগছিলেন এই কবি। গত বছর বার্লিনের নয়াকোলনের একটি হাসপাতালে তাকে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে জানা যায়, একাকিত্ব, বার্ধক্যজনিত রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পর, ৭৩ বছর বয়সে নিঃশব্দে পাড়ি দিলেন অনন্তের পথে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করা দাউদ হায়দার ছিলেন বাংলা ভাষার একজন আধুনিক কবি। সত্তর দশকের অন্যতম প্রধান কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত এই কবির অন্যতম আলোচিত কাব্যগ্রন্থ হলো ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’। তিনি দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন সত্তরের দশকের শুরুতে।

বিশ্বমঞ্চে বাংলা কবিতাকে উজ্জ্বল করে তোলার স্বীকৃতিস্বরূপ, ১৯৭৩ সালে লন্ডন সোসাইটি ফর পোয়েট্রি তার একটি কবিতাকে ‘দ্য বেস্ট পোয়েম অব এশিয়া’ খেতাবে ভূষিত করে। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি বাংলা ট্রিবিউন-এ নিয়মিত কলাম লিখতেন।

কবিতার জন্য স্বাধীনতার পরেও যিনি শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য হন, যিনি আজীবন নিঃসঙ্গতায় ভুগে অবশেষে পরবাসে নিঃশব্দে চলে গেলেন— দাউদ হায়দার তাই একাই ইতিহাস হয়ে থাকবেন বাংলা সাহিত্যে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *