সীমান্তে পাকিস্তানের তীব্র গোলাবর্ষণে ভারতীয় সেনা নিহত, দুই দেশের উত্তেজনা আরও তীব্র

ভারতের হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সীমান্ত–সংলগ্ন এলাকায় বুধবার (৭ মে) দিনভর তীব্র গোলাবর্ষণ চালিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন এক ভারতীয় সেনা সদস্য, দিনেশ কুমার (Dinesh Kumar)। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বুধবার রাত ১১টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর মৃত্যুর খবর ঘোষণা করা হয়। তাঁর মৃত্যুতে চলমান সংঘাতে ভারতীয় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে।

ভারতের হোয়াইট নাইট কোর (White Knight Corps) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে বলেছে, “৫ ফিল্ড রেজিমেন্টের ল্যান্স নায়েক দিনেশ কুমার পাকিস্তানের গোলাবর্ষণের সময় চূড়ান্ত আত্মত্যাগ করেছেন। আমরা তাঁর সাহসিকতাকে শ্রদ্ধা জানাই এবং পুঞ্চ সেক্টরে যারা নিরীহভাবে হামলার শিকার হয়েছেন, তাঁদের পাশে আছি।”

পাকিস্তানি সেনারা বিশেষ করে পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুঞ্চ এলাকায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা পাল্টা জবাব দিচ্ছে।

পুঞ্চ জেলার কৃষ্ণাঘাটি, শাহপুর, মানকোট এবং রাজৌরি জেলার লাম, মাঞ্জাকোট ও গম্ভীর ব্রাহ্মণা এলাকায় সবচেয়ে বেশি গোলাবর্ষণ হয়েছে। উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লার উরি সেক্টর ও কুপওয়ারার তাংধার সেক্টরেও পাকিস্তানের হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর মিলেছে।

বারামুল্লার গিঙ্গাল গ্রামেও পাকিস্তানি গোলা আঘাত করেছে, যা শহর কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত। এখানে অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই সালামাবাদ এলাকার বাসিন্দা।

উরির এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। তখন আমরা বাংকারে আশ্রয় নিই। এরপর গোলাবর্ষণের তীব্রতা ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ২০২১ সালের যুদ্ধবিরতির পর এটিই সবচেয়ে খারাপ অবস্থা।”

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তের কাছে ও আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষ ভূগর্ভস্থ বাংকারে অবস্থান নিচ্ছেন। কামালকোট, সালামাবাদ, দাচনা ও গিঙ্গাল গ্রামের কমপক্ষে ১৫টি বাড়ি পাকিস্তানি গোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, এ হামলায় ৩১ জন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছেন। পাল্টা পাকিস্তানি গোলাবর্ষণে ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছেন।

সম্প্রতি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই। এখন এই উত্তেজনা সরাসরি পাল্টাপাল্টি হামলায় পরিণত হয়েছে, যা দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *