ঠাকুরগাঁও শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের সেই পুড়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ (Awami League) কার্যালয়, যা দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল, সেখানে এবার ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে একটি নতুন সংগঠনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘিরে এলাকাজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে, কারণ অনেকেই বিষয়টিকে ‘জায়গা দখল’ হিসেবে দেখছেন।
বুধবার (১৪ মে) দুপুরে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই কার্যালয়ে একদল যুবক হঠাৎ উপস্থিত হয়ে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেন এবং ভবনের একাংশে ‘জুলাই যোদ্ধা, ঠাকুরগাঁও’ লেখা পিভিসির সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। ভবনের নিচতলায় দোকানপাট চালু থাকলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ছিল। আওয়ামী লীগের পোড়া সাইনবোর্ড এখনো ভবনের এক পাশে ঝুলছে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে সরকারি খাস জমিতে দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হয়। এরপর ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর সেখানে তিনতলা ভবন নির্মাণ করে জেলা আওয়ামী লীগ। কিন্তু ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিক্ষুব্ধ জনতা কার্যালয়টিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সেই থেকে ভবনটি ব্যবহারের বাইরে ছিল।
নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধার’ আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে রায়হান অপু নামের এক যুবক জানান, “আওয়ামী লীগ এই খাস জমি দখল করে দলীয় কার্যালয় গড়ে তোলে। গত বছরের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন ঘটলে এই ভবনটি জনতার প্রতিরোধেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এটি পড়ে ছিল। আমরা যারা ওই অভ্যুত্থানে আহত হয়েছি, তাদের সংগঠন ‘জুলাই যোদ্ধা’ এই জায়গাটি এখন সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করবে।”
তিনি আরও বলেন, “এখানে একটি যুব ক্লাব গড়ে তোলা হবে। জিমনেসিয়াম থাকবে, যাতে এলাকার যুবকরা শরীরচর্চা করতে পারেন। ভবনের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের সংগঠনের যাত্রা শুরু করলাম।”
আরেক সদস্য, হাসান আলী, নিজের ‘জুলাই যোদ্ধা স্বাস্থ্য কার্ড’ দেখিয়ে জানান, “সবাই অভ্যুত্থানে আহত। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে।” তিনি জানান, সংগঠনের যাত্রা উপলক্ষে রাতে একটি ভোজের আয়োজন করা হয়েছে এবং স্থানীয় সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
তবে এ নিয়ে উঠেছে আইনি প্রশ্নও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আইনজীবী বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারি খাস জমিটি বৈধ প্রক্রিয়ায় বন্দোবস্ত পেয়েছিল। দল নিষিদ্ধ হলেও বন্দোবস্ত এখনো বাতিল হয়নি। কাজেই সাইনবোর্ড টানিয়ে কার্যক্রম চালানো সরাসরি দখল হিসেবে গণ্য হতে পারে।”
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক (Ishrat Farzana) ইশরাত ফারজানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ ঘটনার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামের নতুন একটি সংগঠনের প্রকাশ্য আত্মপ্রকাশ ঘটল, তেমনি জমি দখল, রাজনৈতিক সম্পত্তির মালিকানা ও প্রশাসনের নীরবতা ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন।