বনানীতে সিসা লাউঞ্জে নারকোটিক্সের সাঁড়াশি অভিযান, বিদেশি নাগরিকসহ তরুণ-তরুণী আটক

রাজধানীর বনানী জোনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এক নজিরবিহীন সিসাবিরোধী অভিযানে কাঁপন উঠেছে ঢাকার অভিজাত মাদক স্পটগুলোতে। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (Department of Narcotics Control)–এর মহাপরিচালক হাসান মারুফ। অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল বনানী ১১ নম্বর রোডের কুখ্যাত “হেইজ” সিসা লাউঞ্জ, যেখানে রাতের আঁধারে চলছিল মাদক সেবনের আসর।

অভিযান চলাকালে হেইজ লাউঞ্জে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় শতাধিক তরুণ-তরুণীকে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন নামিদামি উঠতি মডেল ও অভিনয়শিল্পী। এছাড়াও এক কক্ষে কয়েকজন মধ্যপ্রাচ্যের দেশের পাসপোর্টধারী বিদেশিকে সিসা সেবন করতে দেখা যায়। নারকোটিক্সের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা উত্তেজিত হয়ে নিজেরা নিজেদের দূতাবাস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাণ্ডবের চেষ্টা চালান।

এক কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, একটি অন্ধকার কক্ষে ছয়জন বিদেশি নাগরিক ও তরুণীদের একসঙ্গে সিসা সেবনের সময় হাতেনাতে ধরা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে তখনই, যখন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন। রাতেই পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।

হেইজ লাউঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয় ২৬টি হুঁকা, সাত কেজি নিষিদ্ধ সিসা ও বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ। অভিযানের পর বনানী থানায় দায়ের করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির ১২ জন মালিকের নাম উল্লেখ করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন: কাজী মোহাম্মদ সামি, নাজমুল সাকিল, চৌধুরী গোলাম আনাস, মোহাম্মদ আম্মার, মুফরাত হাসান ওরফে বান্টি, আল রহমান, সাদমান হোসেন, সাকিব হোসেন, সৈয়দ মুহাম্মদ তাহমিদ আহসান ও আহমেদ মোস্তফা ওরফে রাসেল। এছাড়াও ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম ওরফে জসিম ও ইমরান হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই অভিযানের দ্বিতীয় ধাপে নারকোটিক্স অভিযান চালায় বনানীরই ৫০ নম্বর বাড়ির ১৩ তলায় অবস্থিত “সিগনেচার লাউঞ্জ” নামের আরেকটি কুখ্যাত সিসা লাউঞ্জে। সেখান থেকেও গ্রেফতার করা হয় চারজন—স্বপন মিয়া, শাকিল, সিয়াম ও আ. রায়হান। পলাতক আছেন তারেক জামিল নামের আরেক ব্যক্তি।

সিগনেচার লাউঞ্জ থেকে জব্দ করা হয় পাঁচ কেজি সিসা, ২০টি হুঁকা এবং কয়েক বোতল বিদেশি মদ।

এই বিশাল অভিযান পরিচালনায় অংশ নেন অন্তত ৩৫ জন কর্মকর্তা, যার মধ্যে ছিলেন নারকোটিক্সের পরিচালক অপারেশন অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমেদ, গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ বদরুদ্দীন, উপপরিচালক শামীম আহমেদ, মানজুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান ও আব্দুল হামিদ।

অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই গুলশান-বনানী অঞ্চলের মাদক সংশ্লিষ্টরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কেউ কেউ লাউঞ্জ বন্ধ করে সটকে পড়ে।

নারকোটিক্সের অতিরিক্ত পরিচালক একেএম শওকত ইসলাম জানান, ২ শতাংশের বেশি নিকোটিন থাকলে সিসা মাদক হিসেবে গণ্য হয়, এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সিসা লাউঞ্জের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলবে।

দুলাল কৃষ্ণ সাহা, নারকোটিক্সের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক, বলেন, রাজধানীর এসব লাউঞ্জে পরিবেশিত সিসায় উচ্চমাত্রায় নিকোটিন থাকে, যা তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতদিন নানা সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলেও, এবার দৃঢ়ভাবে মাঠে নেমেছে কর্তৃপক্ষ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *