একক প্রার্থী ও ঐক্যবদ্ধ কৌশলে নির্বাচনমুখী জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন

রাজনৈতিক মতাদর্শ ও ত্বরিকাগত পার্থক্য থাকলেও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে একক কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে দুই প্রভাবশালী ইসলামি দল—জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (Islami Andolan Bangladesh)। এই দুই দলের মধ্যে একাধিক বৈঠক ও সমঝোতার মাধ্যমে একটি বৃহৎ ইসলামপন্থি রাজনৈতিক জোটের ভিত্তি স্থাপন করা হচ্ছে, যেখানে আরও অন্তত আটটি ইসলামপন্থি দল যুক্ত হচ্ছে।

মূল উদ্দেশ্য—ইসলামপন্থিদের ভোট একত্রিত করে একটি অভিন্ন ‘ভোট বাক্স’ তৈরি, যার মাধ্যমে বিএনপির বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে চায় জোটটি। ২৮ জুন রাজধানীর সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে এই ঐক্যের ঘোষণা স্পষ্টভাবে উঠে আসে। সেখানে ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, “যদি কেউ মোনাফেকি না করি, তবে আগামীতে ক্ষমতায় যাবে ইসলামী শক্তি।” তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “এই সমাবেশ সাক্ষী থাকবে—যারা মোনাফেকি করবে, জাতি তাদের চিহ্নিত করবে।”

জানা গেছে, জামায়াতের আমীর এবং চরমোনাই পীরের একান্ত বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনার সূচনা হয়। জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “নির্বাচনী সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক দলগুলোকেও আমরা আমন্ত্রণ জানাতে চাই।”

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম জানান, চরমোনাই পীর ও জামায়াত আমীরের মধ্যে একাধিক অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে এবং নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়া সম্ভব। তিনি জানান, এবার শুধু ইসলামী দল নয়, সমমনা অন্যান্য দলকেও ঐক্যের আওতায় আনতে চাই।

এই উদ্যোগের সূচনা করেছিলেন চরমোনাই পীর, সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (Syed Muhammad Rezaul Karim)। গত এপ্রিল মাসে তার আহ্বানে পাঁচটি নিবন্ধিত ইসলামি দল একটি প্রাথমিক ঐক্যে পৌঁছায়। ওই দলগুলো হল—বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি এবং খেলাফত মজলিস। এরপর বরিশালে জামায়াত আমীরের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ইসলামপন্থি ভোট এক বাক্সে আনার বিষয়ে ঐক্যমত হয়।

২০ জানুয়ারি বরিশালে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান সরাসরি চরমোনাই পীরের সঙ্গে দেখা করে এই ঐক্যের ব্যাপারে আলোচনা করেন। এরপরই ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গিয়ে ১০ দফা দাবিতে স্বাক্ষর করেন। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইসলামী আন্দোলন ও বিএনপির সম্পর্কের ধারা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বরং সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিএনপিকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করতেও দেখা গেছে।

তবে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। একাধিকবার দুই দলের দায়িত্বশীল নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে এ ঐক্যের চিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।

সূত্র জানায়, আসন্ন নির্বাচনে অন্তত ১০টি ইসলামী দল একক প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, “ইসলামপন্থিদের অভিন্ন বাক্স গঠনের ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে, কেউ গোপন কোনো ষড়যন্ত্রে পা দেবে না।”

এছাড়া ২৯ মে খেলাফত মজলিস কার্যালয়ে ইসলামী লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে আসনভিত্তিক একক প্রার্থী মনোনয়ন কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। বড় পরিসরের ঐক্যের উদ্দেশ্যে উলামা, পীর-মাশায়েখ ও দীনদার বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়েরও সিদ্ধান্ত হয়।

আরও জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলনের আমীরের ডাকে ২৪ এপ্রিল এক বৈঠকে বিভিন্ন দলের নেতা একত্রিত হন এবং ভোট এক বাক্সে পাঠানোসহ কয়েকটি বিষয়ের ওপর ঐকমত্যে পৌঁছান। এছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ, এবি পার্টি, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গেও সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। এমনকি ইসলামী আন্দোলনের ওলামা সংগঠন আইম্মা পরিষদের বিভিন্ন আয়োজনে জামায়াতসহ অন্য ইসলামি দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে—ভবিষ্যতের বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তি তৈরিতে। তথ্যসূত্র : মানবজমিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *