রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস (Mirpur DOHS) এলাকায় ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর’ পরিচয়ে একটি বাসায় ঢুকে ডাকাতির চেষ্টার সময় স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েছে চারজন। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক লেফটেন্যান্ট ফিরোজ ইফতেখার ও সাবেক কর্পোরাল মুকুল—দুজনই সেনাবাহিনী থেকে বিতাড়িত।
শনিবার বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে মিরপুর ডিওএইচএসের ৮০৭ নম্বর বাসার পঞ্চম তলায় পাঁচজনের একটি দল প্রবেশ করে। নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তারা টার্গেট করে ভাড়াটিয়া বোরহানের বাসাটি। কিন্তু বোরহান বাসায় না থাকায়, ঘরে থাকা স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল, ল্যাপটপসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ব্যাগে ভরতে থাকে তারা।
এই ঘটনায় সন্দেহ জাগে স্থানীয় বাসিন্দা হারুনুর রশিদের। মোটরসাইকেলে করে ওই ব্যক্তিদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি অনুসরণ করে তিনি চিৎকার করে আশপাশের লোকজনকে সতর্ক করেন—‘ডাকাত যাচ্ছে!’ এরপর এনডিসি চেকপোস্টের কাছে গাড়িটি সামনের একটি গাড়ির কারণে আটকে গেলে, স্থানীয় জনতা এসে পাঁচজনকেই আটকে ফেলে এবং পরে পুলিশে সোপর্দ করে।
পল্লবী থানা পুলিশ (Pallabi Police Station) জানায়, বর্তমানে চারজন পুলিশ হেফাজতে আছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। কর্পোরাল মুকুল (অবসরপ্রাপ্ত) দাবি করেন, মিরপুর-১০ নম্বরের এক চায়ের দোকানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় হারুনুর রশিদের। হারুন নাকি দাবি করেন, একজন ব্যক্তির কাছে অবৈধ অস্ত্র আছে, সেই তথ্যের ভিত্তিতেই ‘অভিযান’ চালানো হয়েছিল।
তবে পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি কোনও বৈধ অভিযান ছিল না—বরং ছিল পরিকল্পিত ডাকাতির চেষ্টার ঘটনা। পুলিশ আরও জানায়, আটক ফিরোজ ইফতেখার সেনাবাহিনী থেকে ২০০৭ সালে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে অবসর নেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসিরের ঘনিষ্ঠ এবং তার নেতৃত্বাধীন ‘জাস্টিস ফর কমরেডস’ (Justice for Comrades) সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। অন্যদিকে কর্পোরাল মুকুল যুক্ত আছেন ‘সহযোদ্ধা’ (Shojoddha) নামে একটি গ্রুপের সঙ্গে, যা গঠিত হয়েছে সেনাবাহিনী থেকে বিতাড়িত বা অসন্তুষ্টদের নিয়ে।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচটি মোবাইল ফোন, ডায়মন্ড ও স্বর্ণালংকার, ল্যাপটপ, তিনটি দামি ঘড়ি, প্রসাধনী সামগ্রী, কিছু ইয়াবা ট্যাবলেট এবং পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। পরবর্তীতে আটক ব্যক্তিদের পল্লবী থানায় হস্তান্তর করা হয়।
পল্লবী থানার ওসি শফিউল আলম বলেন, “এই ঘটনায় চারজন আমাদের হেফাজতে আছেন। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি।”