সংবিধানের মূল দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংবিধানে বর্ণিত চার মূলনীতি—বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে শেষ মুহূর্তে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বর্জন করেছে বাম রাজনৈতিক দলগুলো। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাত ৯টা ১০ মিনিটে ফরেন সার্ভিস একাডেমি (Foreign Service Academy)-তে অনুষ্ঠিত বৈঠকের মাঝপথে বৈঠক ত্যাগ করে দলগুলো।
বৈঠক থেকে সরে যাওয়া দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাসদ, বাংলাদেশ বাসদ, ও বাসদ (মার্ক্সবাদী)। দলগুলোর পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে জানানো হয়, সংবিধানের ৪ মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা—কে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার নতুন মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’র কথা প্রস্তাব করা হয় বৈঠকে। এই প্রস্তাবকে তারা ‘সংবিধানের আদর্শ পরিত্যাগ’ হিসেবে দেখছেন।
কমিউনিস্ট পার্টির এক নেতা সাংবাদিকদের বলেন, “যে প্রস্তাব এসেছে তা একধরনের আদর্শচ্যুতি। এর মাধ্যমে ’৭২-এর সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিত্যক্ত হয়েছে।”
বৈঠকের মূল আলোচ্য ছিল ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ পদ্ধতির প্রস্তাব। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন কাঠামোয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হবে র্যাঙ্কিং পদ্ধতিতে। এই প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার, প্রধান দুই দলের বাইরে তৃতীয় বৃহৎ দলের প্রতিনিধি ও দুই বিচারপতির অংশগ্রহণে একটি কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটি বিভিন্ন দলের প্রস্তাবিত নামের মধ্যে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ও সদস্য ঠিক করবে।
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার নীতিগত বিষয়ে একমত হলেও এর গঠন প্রক্রিয়া ঘিরে দ্বিমত রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি, সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, লেবার পার্টি, ও খেলাফত মজলিস প্রক্রিয়ার ওপর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। তাদের দাবি, সরকার গঠনের প্রক্রিয়া কমিশনের হাতে না রেখে সংসদের ওপর ন্যস্ত করা হোক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলো দেশকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গ্রহণযোগ্য সরকার ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে নিতে পারে, তবে তাতে সব পক্ষের আস্থা ও সম্মতি অর্জন করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।