বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর (Badruddin Umar) আর নেই। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। রবিবার সকালে গুরুতর অবস্থায় তাঁকে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সকাল ১০টা ৫ মিনিটে সেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম।
শিক্ষা ও পেশাজীবনের শুরুতে বদরুদ্দীন উমর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। একযুগেরও বেশি সময়ের শিক্ষকতা শেষে তিনি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় হন। তাঁর পিতা আবুল হাশিম (Abul Hashim) ছিলেন ভারত উপমহাদেশের এক বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাঁর চিন্তা ও আদর্শ উমরের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
রাজনৈতিক জীবনে বদরুদ্দীন উমর ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী। তিনি এক সময় পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল গঠন করেন এবং এর সভাপতির দায়িত্ব নেন, যা পরবর্তী সময়ে প্রগতিশীল আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পায়।
নিজের জন্ম সম্পর্কে উমর লিখেছিলেন তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ আমার জীবন-এর ভূমিকায়। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর, রবিবার দুপুর দুটোয় পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরে তাঁর জন্ম হয়েছিল।
চলতি বছর সরকার তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে। তবে উমর সেই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, “১৯৭৩ সাল থেকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমাকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু আমি কোনো পুরস্কার গ্রহণ করিনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে, তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। তবে এই পুরস্কার গ্রহণ আমার পক্ষে সম্ভব নয়।” নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি লিখিতভাবে বিষয়টি জনগণকে জানান।
দেশের বামপন্থী আন্দোলনের পুরোধা, গবেষক ও রাজনৈতিক চিন্তার ধারক বদরুদ্দীন উমরের প্রয়াণে দেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক শূন্যতা তৈরি হলো।