জাতীয় নির্বাচনের আলোচনায় অগ্রণী বিএনপি, কোণঠাসা জামায়াত

জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছোট দলগুলোর মধ্যে নতুন সমীকরণ শুরু হলেও, সবচেয়ে স্পষ্ট সংকট দেখা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami)-র অবস্থান নিয়ে। যেখানে বিএনপি স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক সংস্কার, গণভোট এবং সাংবিধানিক সমাধানের পক্ষে সুনির্দিষ্ট অবস্থান নিচ্ছে, সেখানে জামায়াত যেন এখনো পুরনো অচল মডেল আঁকড়ে ধরে রেখেছে।

সম্প্রতি রাজধানীর হাতিরপুলে অনুষ্ঠিত ৯টি ছোট দলের বৈঠকে জুলাই সনদের ভিত্তিতে একটি গণভোট আয়োজনের বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে ওঠে। তবে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল মূলত বিএনপি (BNP)–কে ঐ ঐকমত্যে যুক্ত করার ব্যাপারে প্রবল আগ্রহ। কারণ, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নেতারা উপলব্ধি করেছেন, জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক সমাধান আনতে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কোনো কাঠামো টেকসই হতে পারে না।

এর বিপরীতে জামায়াতকে নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। সংস্কার ও জুলাই সনদ ইস্যুতে জামায়াতের দ্ব্যর্থহীন অবস্থান বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। এমনকি জামায়াতের এই অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি সমঝোতার পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানকে বিএনপি ও অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই তিন নেতাই স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, বিএনপির সংস্কারপন্থী অবস্থানই এখন ঐকমত্য তৈরির সবচেয়ে বড় ভিত্তি হয়ে উঠেছে।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, এনসিপির জাবেদ রাসিন এবং এবি পার্টির সানী আবদুল হক সাংবিধানিক ও আইনগত বিষয় দেখার দায়িত্বে রয়েছেন। তাদের বক্তব্য থেকেও স্পষ্ট, জামায়াতের সঙ্গে যেকোনো সংলাপ এখনো অপ্রাতিষ্ঠানিক ও অনিশ্চিত।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “আমরা আলোচনা করছি কীভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা যায়। এ নিয়ে বিএনপি এবং বামধারার দলগুলোর সঙ্গে ইতিবাচক সংলাপ হয়েছে। তবে জামায়াতের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”

ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুও বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যাতে বিএনপিসহ সংশ্লিষ্ট দলগুলো একটি বাস্তবধর্মী ঐক্যমত্যে আসে। কিন্তু জামায়াতের অবস্থান অনেক সময় সেই ঐক্যের ধারায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।”

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “বিএনপি এবং অন্যান্য দলকে আমরা এক জায়গায় আনার চেষ্টা করছি। তবে কেউ যদি একমুখী ও অচল অবস্থানে আটকে থাকে, তাহলে ঐক্য সম্ভব নয়।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সমীকরণে বিএনপি একটি ‘সমাধানমুখী কেন্দ্রীয় শক্তি’ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, যারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা নিচ্ছে। অপরদিকে, জামায়াত বারবার বিতর্ক ও বিভেদের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে—যার ফলে তারা দিন দিন মূলধারার রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

নির্বাচনের আগে যে নতুন জোট–চেষ্টা শুরু হয়েছে, তা একদিকে বিএনপির জন্য একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের সুযোগ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে জামায়াতের জন্য তৈরি হচ্ছে রাজনৈতিক কোণঠাসা হয়ে পড়ার বাস্তবতা। বিএনপি যেখানে ভবিষ্যত রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে, জামায়াত সেখানে অবিশ্বাস এবং বিভাজনের প্রতীক হিসেবে থেকে যাচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *