থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চানভিরাকুল (Anutin Charnvirakul) তার সদ্য ঘোষিত মন্ত্রিসভায় বিশিষ্ট মুসলিম নারী রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী জুবাইদা থাইসেত (Zubaida Thaiset)-কে সংস্কৃতি মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মুসলিম নারী পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি কেবল সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তির ইঙ্গিত নয়, বরং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের শাসন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হওয়ার প্রতীক।
জুবাইদার এই পদোন্নতিকে সাম্প্রতিক থাই রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী চানভিরাকুলের স্পষ্ট লক্ষ্য হলো এমন একটি বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মন্ত্রিসভা গঠন করা, যেখানে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যথার্থ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত থাকবে।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জুবাইদা যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করেছেন এবং থাইল্যান্ডের আসাম্পশন ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর আগে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উপমন্ত্রী পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এক পরিবারের সদস্য; তার পিতা চাদা থাইসেত (Chada Thaiset) ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী এবং শীর্ষস্থানীয় প্রাদেশিক রাজনীতিবিদ।
দক্ষিণ থাইল্যান্ডের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান পরিচয়, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য জুবাইদার নিয়োগকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এখন দ্বিমুখী দায়িত্ব—একদিকে ঐতিহ্য ও শিল্পকলার সংরক্ষণ, অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের সাংস্কৃতিক চাহিদা পূরণ। আশা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে জুবাইদা সাংস্কৃতিক বহুমুখিতা, ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং আধুনিকতার সঙ্গে ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটাতে সক্ষম হবেন।
তার অর্থনৈতিক অভিজ্ঞতা বিশেষত সৃজনশীল শিল্প ও সাংস্কৃতিক অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে থাইল্যান্ডের বৈশ্বিক পর্যটন খাতে সাংস্কৃতিক পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনে তার নেতৃত্ব কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই পদোন্নতি থাইল্যান্ডের মুসলিম নারী ও তরুণ প্রজন্মের জন্য এক বিরাট অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত। এটি প্রমাণ করছে, ধীরে ধীরে লিঙ্গ ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতা ভাঙছে এবং নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পথ আরও প্রশস্ত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন, যদি জুবাইদা সফলভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তবে ভবিষ্যতে নারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভূমিকা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে সমাজে নারীর ভূমিকা সম্পর্কে প্রচলিত ধারণারও পরিবর্তন ঘটবে।
সূত্র: ইকনা