ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি অনুযায়ী, রোজার আগেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে কমিশন, যেখানে তফসিল ঘোষণার পর প্রায় ৬০ দিন সময় থাকবে প্রস্তুতির জন্য।
তবে এখনো নির্দিষ্ট তারিখ জানানো হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ ও সংলাপে ওঠা দাবির প্রেক্ষিতে আগামী সপ্তাহেই তফসিলের তারিখ জানানো হতে পারে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে আভাস দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা ও সমন্বয়ের প্রস্তুতি
নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে দ্বিতীয় দফায় সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে গণভোটের জন্য এখনো অধ্যাদেশের অপেক্ষায় রয়েছে সংবিধিবদ্ধ এই সংস্থা। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল (Asif Nazrul) জানিয়েছেন, জাতীয় সনদের প্রশ্নে মাত্র তিন-চার দিনের মধ্যে আইন পাশ করা সম্ভব।
সিইসি এএএম নাসির উদ্দিন (AAM Nasir Uddin)-এর নেতৃত্বে নভেম্বরের শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা করছে ইসি। ২৭ নভেম্বর বাহিনী প্রধান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রথম বৈঠক এবং ৩০ নভেম্বর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
কেন্দ্রীয় সমন্বয় সেল গঠন
নির্বাচনের আগে গুজব, অপপ্রচার, এআই-নির্ভর মিথ্যা তথ্য ইত্যাদি রোধে ‘আইনশৃঙ্খলা কেন্দ্রীয় সমন্বয় সেল’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্যান্য কমিশনার, ইসি সচিব ও কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আইনশৃঙ্খলা, মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচার, এআই নির্মিত বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট প্রতিরোধ এবং বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কার্যকর সমন্বয়ের জন্য একটি সেল গঠন করা হচ্ছে।”
এ পর্যন্ত ২০ অক্টোবর একটি আইনশৃঙ্খলা সভা এবং ৩০টি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। সেসব বৈঠকের সুপারিশ ও নির্দেশনা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে নির্বাচন কমিশন।
তফসিল কবে?
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজন করা হবে। ইসি বলছে, চূড়ান্ত আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের পর তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার (Anwarul Islam Sarkar) জানিয়েছেন, “তফসিল ঘোষণার সময় গণভোট আইন পাশ না হলে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসতে পারে। দুই মাসের ব্যবধানে ভোট আয়োজনের লক্ষ্য রয়েছে আমাদের।”
ইসি সূত্রে জানা গেছে, এক দিনে ভোটগ্রহণ হবে, দুটি ব্যালট থাকবে—ভিন্ন রঙে। তবে গণভোট অধ্যাদেশ না আসলে এসব পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে না।
সংসদ নির্বাচনের তফসিলের ইতিহাস
১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছিল জানুয়ারির ৭ তারিখে, এবং ভোট হয়েছিল ৭ মার্চ—৬০ দিন ব্যবধানে। এরপরের নির্বাচনগুলোতেও প্রায় ৪০-৭৮ দিনের ব্যবধানে তফসিল থেকে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে (২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি) তফসিল ঘোষিত হয়েছিল ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর, ভোটের আগেই ৫৩ দিন সময় ছিল।
দলীয় অংশগ্রহণের চিত্র
২০০৮ সালে দলীয় নিবন্ধন চালু হওয়ার পর নিবন্ধিত দলের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন ৫৫টিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে একটি দলের নিবন্ধন স্থগিত, তিনটি বাতিল হয়েছে। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ২৮টি দল। এবার সংলাপে ডাকা হয়েছে ৪৮টি দলকে।
প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ১৪টি দল, নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর পঞ্চম সংসদে অংশ নেয় ৭৫টি দল, আর সপ্তম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় সর্বোচ্চ ৮১টি দল। তবে দশম সংসদে (২০১৪) বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বর্জনের কারণে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হন।
একাদশ সংসদে (২০১৮) ৩৯টি দল অংশ নেয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ভোটে অংশ নেয় ২৮টি দল। এবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ৫৫টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, তা এখনও চূড়ান্ত নয়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, আওয়ামী লীগ (Awami League)-এর নিবন্ধন স্থগিত থাকায় দলটি এবার প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।


